অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৫, ১২:২০ এএম
অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৫, ১২:২০ এএম
ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন
২০৩০ সাল নাগাদ ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে
বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন। উত্তরের প্রান্তিক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে অবদান রাখতে চলতি বছরেই বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাচ্ছে অর্থনৈতিক অঞ্চলটি। উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার যমুনা নদীর অববাহিকায় এই অঞ্চল চালুর মাধ্যমে শুধু জেলার কর্মসংস্থান নয়, আশপাশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে। সম্পূর্ণ পরিবেশ বন্ধব ও পরিকল্পিত অর্থনৈতিক অঞ্চলে গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সংযোগের ফলে অল্প বিনিয়োগে অধিক মুনাফাও পাবেন উদ্যোক্তারা। ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি নামিদামি বেশ কিছু উদ্যোক্তা প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। আরও আগ্রহ দেখাচ্ছেন বিদেশিরা। অঞ্চলটি চালু হলে পাল্টে যাবে সিরাজগঞ্জসহ আশপাশের জেলার অর্থনৈতিক অবস্থা।
সম্প্রতি দেশের বিশাল জনসংখ্যাকে বিকেন্দ্রীকরণ করার লক্ষ্যে দেশের মানচিত্রকে চার প্রদেশে ভাগ করার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। সেই বিবেচনায় অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে সিরাজগঞ্জ জেলা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। এরই অংশ হিসেবে সিরাজগঞ্জ জেলায় যমুনা নদীর কুল ঘেঁষে গড়ে উঠছে সুবিশাল অর্থনৈতিক পয়েন্ট। সেখানে একটি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের পাশাপাশি বিসিক শিল্পপার্ক ও একটি ইপিজেড তৈরির প্রাথমিক পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এই তিন অর্থনৈতিক এলাকায় কাজ পুরোদমে শুরু হলে সিরাজগঞ্জ জেলাসহ উত্তরবঙ্গে নতুন করে প্রায় ১০ লাখ নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে এবং অর্থনীতিতে আনবে বড় পরিবর্তন। চলতি বছরেই বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল। সরেজমিন ঘুরে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
উত্তরবঙ্গে প্রবেশে যমুনা সেতু পার হয়েই দক্ষিণে সদর উপজেলার খাসবড়শিমুল, পঞ্চসোনা, চকবয়রা এবং বেলকুচি উপজেলার বেলছুটি ও বড়বেরা খারুয়া এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল’। ১০৪২ একর জায়গায় গড়ে উঠছে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল। উদ্যোক্তাদের দাবি, এটি বেসরকারি খাতে দেশের বৃহৎ ও গ্রিন ইকোনমিক জোন।
ঐ অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রায় ৪ শতাধিক কোম্পানি গড়ে তোলা সম্ভব। এখানে বড় জায়গাগুলো রাখা হয়েছে বিদেশি উদ্যোক্তাদের জন্যও। সব কলকারখানা চালু হলে এখানে পাঁচ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সম্প্রতি সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) ঘুরে দেখা যায়, রাস্তাঘাট নির্মাণ চলছে ও প্রকল্প এলাকার প্লট চিহ্নিতের কাজ শেষে ইতিমধ্যে দেশি-বিদেশি প্রায় ২০টি প্রতিষ্ঠান ভূমি বুঝে নিতে শুরু করেছে। কয়েকটি কারখানার ভবনের অবকাঠামো নির্মাণের কাজের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। চলতি চছরেই বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাবে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান।
সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল লিমিটেডের (এসইজেডএল) পরিচালক শেখ মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের ইকোনমিক জোনের প্রজেক্ট অফিস চালুর পাশাপাশি কারখানা ব্লক ও রাস্তা চিহ্নিত করে মাটি ভরাটের কাজ প্রায় ৮৫ শতাংশ শেষ। ফেইজ-১ ও ফেইজ-২ এরিয়ার মাঝে একটি সেতু তৈরিও শেষ হয়েছে। শুরু হয়েছে কারখানার শেষ হয়েছে। শুরু হয়েছে কারখানার ব্লক চিহ্নিত করে উদ্যোক্তাদের প্লট বুঝিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া। মোট জমির ৬০ শতাংশ জায়গায় কারখানা তৈরির জন্য ৪০০ মতো প্লট করা হচ্ছে। বাকি জমিতে পার্ক, বনায়ন, পর্যটন সুবিধা, হাসপাতাল, আইসিটি জোন, হাটবাজার, পুকুর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি গড়ে তোলা হবে। শ্রমিকদের জন্য থাকবে অত্যাধুনিক ডরমেটরি। আমরা আশা করছি, ২০২৫ সালেই এখানে প্রথম শিল্পপ্রতিষ্ঠান উৎপাদনে যাবে। আমাদের লক্ষ্য ২০৩০ সাল নাগাদ এখানে সব মিলিয়ে ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা। ব্যক্তি মালিকানাধীন ১১টি কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই ইকোনমিক জোনে প্রায় ৪০০টির মতো প্লট তৈরি হচ্ছে। প্রকল্পের মাস্টার প্ল্যান ও সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারস (পিডব্লিউসি) এবং ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং প্ল্যান করছে জাপান ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট (জেডিআই)। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অবকাঠামোগত সুবিধার পাশাপাশি জল, স্থল এবং রেলপথে উৎপাদিত পণ্য সরবরাহের সুবিধা থাকবে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে।
মনোয়ার হোসেন আরও বলেন, ইকোনমিক জোনকে ঘিরে নদীবন্দর হচ্ছে, রেলওয়ের ইনল্যন্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) কাজ প্রায় শেষ, ট্রেনলাইন আছে, যমুনার ওপর আলাদা রেল সেতু হয়েছে (উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে), ফোর লেনের রাস্তাসহ অনেকগুলো ফ্লাইওভার হয়েছে। এছাড়া এখানে যমুনা নদীর মিষ্টিপানি আছে। যমুনা নদীর পানি ওয়াটার ট্রিপমেন্ট প্ল্যান্টে নিয়ে যাওয়া হবে, সেখান থেকে ফ্যাক্টরিতে সাপ্লাই দেওয়া হবে। কারখানায় গ্যাস সরবরাহ নিয়েও প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে। সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলে অনেক বড় নামিদামি কোম্পানি জমি বরাদ্দ পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার, কন্টিনেন্টাল গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ, ডায়নামিক ড্রেজিং, নিট এশিয়া, এমকে কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, রাতুল ফ্যাব্রিক, অ্যাকটিভ কম্পোজিট মিলস, রাইজিং হোল্ডিংস, রাইজিং স্পিনিং মিলস, মেরিনা প্রপার্টিজ, টেক্সট টাউন, স্কয়ার এক্সেসরিজ এবং স্কয়ার ইলেকট্রনিক্স।
শেখ মনোয়ার হোসেন আরও বলেন, সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন রপ্তানিমুখী উদ্যোক্তাদের সবধরণের সুবিধা নিয়েই তৈরি হয়েছে। ১০ বছরের আয়কর রেয়াত সুবিধা, শুল্কমুক্ত সুবিধা, কাস্টমস বন্ডেড এলাকা হিসেবে ঘোষিত। এছাড়া সামনের দিনগুলোতে শিল্পকারখানার জন্য যেখানে সেখানে জমি পাওয়া অনেক কঠিন হয়ে যাচ্ছে বিধায় ইকোনমিক জোনে পরিবেশগত ও অবকাঠামো সুবিধার কারণে উদ্যোক্তারা বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছেন।