ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৫, ১২:০৮ এএম
রাজধানীর প্রায় আড়াই কোটি মানুষের পানির যোগান দিচ্ছে ঢাকা ওয়াসা। সংস্থাটি দৈনিক ২৬০ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করছে। জুলাই অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর স্থানীয় সরকার বিভাগের পানি সরবরাহ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফজলুর রহমানকে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ঢাকাবাসীকে শতভাগ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন নতুন এমডি। দৈনিক আমার সংবাদকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ঢাকা ওয়াসা নানা দিক তুলে ধরেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দৈনিক আমার সংবাদের নিজস্ব প্রতিবেদক মহিউদ্দিন রাব্বানি
আমার সংবাদ : একজন নাগরিক হিসেবে ওয়াসার সেবার মান কোন পর্যায়ে দেখতে চান?
মো. ফজলুর রহমান : একজন সাধারণ গ্রাহক যেমন প্রত্যাশা করেন আমিও তেমন প্রত্যাশা করি। সেবার ক্ষেত্রে গ্রাহক যে মানে সন্তুষ্ট থাকেন সে পর্যায়ে আমিও দেখতে চাই। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করছি ভালো কিছু করার।
আমার সংবাদ : ওসায়ার দায়িত্ব পেয়ে নগরবাসীকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
মো. ফজলুর রহমান : দায়িত্ব নেওয়ার পর স্থবির হয়ে পড়া প্রকল্পের কাজকে সচল করেছি। ওয়াসার সার্বিক কাজের অগ্রগতির জন্য ইতোমধ্যে দুটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিগত সময়ে নেওয়া সবগুলো প্রকল্প পর্যালোচনা করা হবে। বিল কম-বেশি হয়েছে কি না সে বিষয়ে তদারকি করা হবে। গ্রাহকদের অনেকে অতিরিক্ত বিল নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
আমার সংবাদ : ঢাকা ওয়াসাকে ‘রোল মডেল’ বলা হলেও বাস্তবে কি রোল মডেল হতে পেরেছে?
মো. ফজলুর রহমান : বিগত সময়ে অনেকেই ‘রোল মডেল’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। ‘রোড মডেল’ হওয়ার জন্য যেসব উপায়-উপকরণ থাকা দরকার তা আমাদের নেই। আপনি জানেন, ঢাকায় আড়াই কোটি মানুষ বসবাস করেন। তাদের সবার সার্ভিস দেওয়া খুব সহজ নয়। তারপরও গ্রাহক সেবায় আমরা বদ্ধপরিকর।
আমার সংবাদ : ঢাকা ওয়াসা নগরবাসীর পানির চাহিদা মেটাতে কতটুকু সক্ষম?
মো. ফজলুর রহমান : বর্তমানে ঢাকায় দৈনিক পানির চাহিদা ২৬০ কোটি লিটার। আমরা গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী শতভাগ পানি সরবরাহ করতে সক্ষম। ইতোমধ্যে আমরা এই সেবা দিয়ে আসছি। তবে শীত মওসুমে কিছুটা সমস্য হচ্ছে। কারণ ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার তখন কিছু নেমে যায়। এছাড়া আমাদের পুরাতন পাম্পগুলোতে কিছু সমস্যা রয়েছে। আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি।
আমার সংবাদ : ঢাকা ওয়াসা দুর্নীতিমুক্ত করতে কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন? স্বচ্ছতা নিয়ে আসার কৌশল হিসেবে কী অবলম্বন করেছেন?
মো. ফজলুর রহমান : দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমি সর্বদা কঠোর ও অসহিষ্ণু। আমাদের যে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়ে তারা এসব নিয়ে কাজ করছেন। পাশাপাশি বিল নিয়ে দুর্নীতি করা কর্মকর্তাদের ব্যাপারেও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আমি থাকা অবস্থায় কোনোভাবে দুর্নীতির প্রশ্রয় দিব না। বিগত সময়ে যারা দুর্নীতি করেছে তাদের ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক কাজ করছে। তাদের ক্ষেত্রে মামলা চলমান, তদন্ত চলছে। আমাদের কাছে তথ্য চাইলে আমরা তথ্য দিব। এছাড়া কোনো কর্মকর্তা কোনো অসদুপায় অবলম্বন করলে তাদের বিষয়ে আমাদের নীতিমালা অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি কর্মকর্তাদের পদবি অনুযায়ী প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করা হবে। তবে কোনো ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া কিংবা প্রাপ্য সুযোগ থেকে কাউকে বঞ্চিত করা হবে না। আমি আইনের বাইরে একচুলও নড়ব না।
আমার সংবাদ : স্মার্ট ওয়াটার ম্যানেজমেন্টের কাজ কোন পর্যায়ে?
মো. ফজলুর রহমান : স্মার্ট ওয়াটার ম্যানেজমেন্টের কাজ চলমান। পাইলট প্রকল্প হিসেবে কাজ করছে। এতে অটো মটরের সেবা পাবেন গ্রাহকরা। ঢাকা ওয়াসাকে গ্রাহকবান্ধব হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করবে। এতে গ্রাহকরা স্বচ্ছন্দ ও স্বস্তি পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
আমার সংবাদ : গ্রাহকরা বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছে না। কবে নাগাদ ট্যাপ থেকে সরাসরি পানি করতে পারবে?
মো. ফজলুর রহমান : আপনি যা শুনেছেন নিশ্চয় ঠিক শুনেছেন। স্মার্ট ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে শতভাগ বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করা হবে। তবে এক্ষেত্রে সেবা সংস্থাগুলোর অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনাতাই সবচেয়ে বড় দায়ী। সিটি কর্পোরেশন, বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা, টেলিফোন বিভাগের সাথে সমন্বয় করে কাজ করা দরকার। অপরিকল্পিত ও অসতর্ক মাটি খোঁড়াখুঁড়ি ফলে অনেক ক্ষেত্রে ওয়াসার পাইপ ছিদ্র করে ফেলে। ফলে পাইপে ময়লা প্রবেশ করে। এতে আমাদের সরবরাহ করা বিশুদ্ধ ও স্বচ্ছ পানি গ্রাহকের কাছে ঠিক মতো পৌঁছে না। অভিযোগের তীর আসে ওয়াসার দিকে। তারপরও আমরা আশাবাদী।
আমার সংবাদ : আপনাকে ধন্যবাদ।
মো. ফজলুর রহমান : আপনাকেও ধন্যবাদ।