অক্টোবরে হাসিনার মামলার রায়

• ১ হাজার ২১৪টি ‘গায়েবি’ মামলা প্রত্যাহার

• দু-একদিনের মধ্যে জাতিসংঘের তদন্ত টিমের প্রতিবেদন

• চলতি মাসে চারটি মামলার তদন্তকাজ শেষ হবে

• সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিচারকাজ শুরু হবে ঈদের পর

• হুটহাট করে কাউকে জামিন দেয়া হবে না

অক্টোবরের মধ্যে জুলাই হত্যাকাণ্ডের তিন থেকে চারটি মামলার রায় পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। 

গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা এ কথা বলেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর জুলাই গণহত্যার ৩০০টি অভিযোগ গঠন করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। আইন উপদেষ্টা বলেন, বিভিন্ন অপরাধে প্রসিকিউশন অফিস ১৬টি মামলা দায়ের করেছে।

উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গণহত্যা এবং এর আগে গুম-খুনের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে তিন থেকে চারটির রায় অক্টোবরের মধ্যে পাওয়া যাবে। এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ জড়িতদের আসামি করা হয়েছে। 

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই হত্যাকাণ্ডের যে বিচার, সেই বিচারের অগ্রগতি কী হয়েছে সেটা জানতে চান অনেকে। একটা কমন অভিযোগ হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে জুলাই হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত যে মামলাগুলো সেই মামলার দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। এ ধরনের অসন্তুষ্টির কথা অনেকে বলেন। আমরা উনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলছি, আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হওয়ার পর ইতোমধ্যে এ আদালতে বিচারের যথেষ্ট অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।’

আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘আইন অনুযায়ী বিচার কাজ শুরু হওয়ার পর তিন সপ্তাহ সময় প্রস্তুতির জন্য ডিফেন্স আইনজীবীদের দিতে হয়। আমরা আশা করছি এই তিন সপ্তাহ সময় অতিবাহিত হলে আনুষ্ঠানিকভাবে সাক্ষ্য গ্রহণের যে প্রক্রিয়া, সেটা আপনারা খুব ঘন ঘন দেখবেন। এই সাক্ষ্য গ্রহণ প্রক্রিয়াটা শুরু হবে ঈদের পরপর এপ্রিল মাস থেকে।’ 

তিনি বলেন, ‘আদালতে (আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত) অব্যাহতভাবে শুনানি হয় বলে, সব মামলার রায় পরবর্তী চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে অর্থাৎ এপ্রিল থেকে শুরু করে পরবর্তী চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে প্রদান করা যাবে বলে আশা করি। সেই হিসাবে অক্টোবরের মধ্যে তিন থেকে চারটি মামলার রায় পেতে যাচ্ছি বলে আশা করি। এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, শীর্ষস্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা আসামি হিসেবে রয়েছেন।’ আগামী দু-একদিনের মধ্যে জাতিসংঘের তদন্ত টিমের প্রতিবেদন পাওয়া যাবে বলেও জানান আইন উপদেষ্টা। 

তিনি বলেন, ‘আমি এই রিপোর্টের ব্যাপারে এখনই আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলব না। তবে একটা জিনিস বলে রাখি, তাদের এই রিপোর্ট আমাদের তদন্তকাজ ও বিচারকাজকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করার পাশাপাশি স্বচ্ছ ও সহজ করতে অবদান রাখবে।’ চলতি মাসে চারটি মামলা তদন্তকাজ শেষ হবে। এরপর যাচাই-বাছাই শেষে আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হবে। তিন সপ্তাহ সময় লাগবে। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বিচারকাজ শুরু হবে ঈদের পর। 

আগামী অক্টোবরের মধ্যে তিন থেকে চারটি মামলার আনুষ্ঠানিক রায় হয়ে যাবে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, এদের মধ্যে শেখ হাসিনাসহ শীর্ষস্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এবং শীর্ষস্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা রয়েছেন। সাধারণ কোর্টের রায় দেরি হলেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার দ্রুত হয়ে যাবে।

হুটহাট করে কাউকে জামিন নয় : আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, মামলার এজাহার সুন্দর করে লেখেন, তথ্য দিন। হুটহাট করে কাউকে জামিন দেবেন না, বিচার বিবেচনা করে দেবেন। চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। ১৫ বছর ধরে অরাজকতা, গুম ও খুন হয়েছে। প্রতিটি হত্যার বিচার হতে হবে, এ বার্তা দিতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর রাজারবাগে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ বিষয় কর্মশালায় এসব কথা বলেন তিনি।

প্রত্যাহার হচ্ছে ১২১৪ ‘গায়েবি’ মামলা : ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হওয়া ১৬ হাজার ৪২৯টি ‘গায়েবি’ মামলার মধ্যে এক হাজার ২১৪টি প্রত্যাহার করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। 

গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। আইন উপদেষ্টা বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গণহত্যা এবং এর আগে গুম-খুনের ঘটনায় হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে তিন থেকে চারটি মামলার রায় অক্টোবরের মধ্যে পাওয়া যাবে বলে আশা করি। এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ জড়িতদের আসামি করা হয়েছে।