নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫, ১২:১৪ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫, ১২:১৪ এএম
বাংলাদেশের বিভিন্ন অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পে মার্কিন সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান
প্রতিশোধের চক্র ভেঙে শান্তি-সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, একটি ন্যায়ভিত্তিক, সুসংহত এবং বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন নিরাপত্তা ও উন্নয়ন। এক্ষেত্রে, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর শক্তিশালী ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা অফুরন্ত।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪৫তম জাতীয় সমাবেশ উপলক্ষে গতকাল দেয়া এক বাণীতে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪৫তম জাতীয় সমাবেশ উপলক্ষে এ বাহিনীর নিবেদিতপ্রাণ সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সদস্যদের শুভেচ্ছা জানাই। দেশের তৃণমূল প্রশাসনিক স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত এ বাহিনীর রয়েছে সুরক্ষিত সমাজ কাঠামো, মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সামাজিক উন্নয়ন ব্যবস্থা এবং মানুষের দুয়ারে সেবা পৌঁছে দেয়ার মতো কার্যকর নেটওয়ার্ক।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, বিভিন্ন দুর্যোগে আক্রান্তদের উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় এ বাহিনীর সদস্যরা প্রশংসনীয় অবদান রেখেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন সংস্কারের মাধ্যমে বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়ার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপির নিজস্ব বহুবিধ সংস্কার কার্যক্রম চালু রয়েছে। শিল্প-কারখানা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা নির্বিঘ্ন রাখতে ৫০ হাজারেরও অধিক অঙ্গীভূত আনসার সদস্য কাজ করছে।
তিনি বলেন, দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে ও বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখতে দেশের কূটনৈতিক মিশনসমূহে নিরাপত্তা প্রদানে এ বাহিনীর ভূমিকা দৃশ্যমান। যুবসমাজের কর্মসংস্থান ও তাদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে বাহিনীর গৃহীত অন্তর্ভুক্তিমূলক পদক্ষেপসমূহ আগামীতে এই বাহিনীকে আরও বেশি জনসম্পৃক্ত করে তুলবে। প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উত্তরোত্তর উন্নতি, সমৃদ্ধি এবং দেশ গড়ার কাজে তাদের অব্যাহত কার্যকর ভূমিকা কামনা করেন।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা সবাই এ দেশের সন্তান। প্রতিশোধের কোনো জায়গা থাকা উচিত নয়। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি জ্যাকবসন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টা সমাজে পুনর্মিলনের আহ্বান জানান এবং প্রতিশোধের চক্র ভাঙার ও দেশে শান্তি-সম্প্রীতির ক্ষেত্র তৈরির কথা বলেন। এ সময় তারা পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় এবং বিশ্বজুড়ে ইউএসএআইডির কাজ স্থগিতের মার্কিন সিদ্ধান্তের পরিণতি নিয়ে আলোচনা করেন বলে জানায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
প্রফেসর ইউনূস ও জ্যাকবসন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার এজেন্ডা, রোহিঙ্গা সংকট, অভিবাসন এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করেন। প্রধান উপদেষ্টা একটি ঐকমত্য কমিশন গঠন এবং এর পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করার বিষয়ে তার সামপ্রতিক পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন।
এ সময় তিনি বলেন, সংস্কারের বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছানোর পর রাজনৈতিক দলগুলো এগুলো বাস্তবায়নের জন্য জুলাই সনদে সই করবে। চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জ্যাকবসন এ সময় জোর দিয়ে বলেন, নতুন সরকারের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হওয়া উচিত। সম্প্রতি নিরাপত্তা বাহিনী যে অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরু করেছে, সে সম্পর্কেও খোঁজখবর নেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের অভিযানকালে যেকোনো মূল্যে মানবাধিকার সমুন্নত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশে বসবাসরত ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখায় মার্কিন প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রফেসর ইউনূস বিশ্বের অন্যতম স্বনামধন্য স্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআরবির জীবন রক্ষাকারী প্রচেষ্টাসহ বাংলাদেশের অন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে সহায়তা স্থগিতের মার্কিন সিদ্ধান্তের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বাংলাদেশ ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের হাইতির মতো দেশে ডায়রিয়া ও কলেরায় মৃত্যুর হার প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে আইসিডিডিআরবির ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।
প্রফেসর ইউনূস বলেন, ইউএসএআইডির সঙ্গে যাই ঘটুক না কেন, পুনর্গঠন, সংস্কার ও পুনর্গঠনের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাংলাদেশের যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘এটা বন্ধ করার সময় নয়।’ প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে বসবাসরত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য সহায়তা কার্যক্রম চালু রাখার জন্য মার্কিন প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি জীবনরক্ষাকারী বিভিন্ন গবেষণায় সম্পৃক্ত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআরবিতেও সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার জন্য মার্কিন প্রশাসনকে ধন্যবাদ। তবে বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত স্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআরবির জীবন রক্ষাকারী প্রচেষ্টাসহ বাংলাদেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোতে সহায়তা স্থগিত করার মার্কিন সিদ্ধান্ত নিয়ে উদ্বেগ জানান তিনি। এ সময় তিনি প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলের হাইতির মতো দেশগুলোতে ডায়রিয়া এবং কলেরাজনিত মৃত্যু প্রায় শূন্যে নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে আইসিডিডিআরবির ভূমিকা তুলে ধরেন।
ড. ইউনূস বলেন, ইউএসএআইডির সঙ্গে যাই ঘটুক না কেন, পুনর্গঠন, সংস্কার এবং পুনর্গঠনের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাংলাদেশের মার্কিন সহায়তা প্রয়োজন। এটা থামানোর সময় নয়। বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার এজেন্ডা, রোহিঙ্গা সংকট, অভিবাসন এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন। তিনি একটি ঐকমত্য কমিশন গঠন এবং এর তত্ত্বাবধানে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরুর জন্য তার সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘সংস্কারগুলোর বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর পর, রাজনৈতিক দলগুলো সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে’। এ সময় চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জ্যাকবসন নতুন সরকারের জন্য নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন। তিনি দেশের নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক সম্প্রতি শুরু হওয়া অপারেশন ডেভিল হান্ট সম্পর্কেও জানতে চান।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, তিনি বাংলাদেশি সমাজে পুনর্মিলনের আহ্বান জানিয়েছেন, প্রতিশোধের চক্র ভাঙতে এবং দেশে শান্তি ও সমপ্রীতির ভিত্তি তৈরি করতে জনগণকে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা সবাই এই দেশের সন্তান। প্রতিশোধের কোনো স্থান থাকা উচিত নয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো অভিযানের সময় যেকোনো মূল্যে মানবাধিকার বজায় রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।