Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫,

বইপ্রেমী স্বপন মিয়ার গুঞ্জন পাঠাগার

মনির হোসেন

মনির হোসেন

ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫, ১২:৩৭ এএম


বইপ্রেমী স্বপন মিয়ার গুঞ্জন পাঠাগার

২০০৪ সালের ৩০ জানুয়ারি একটি বাঁশের তাক বানিয়ে মাত্র তিনটি বই নিয়ে ‘গুঞ্জন পাঠাগার’ নামে যাত্রা শুরু করেন স্বপন মিয়া। এর জন্য তাকে ঋণও করতে হয় আট হাজার টাকা। ছোট্ট টিনের ঘর থেকে বর্তমানে একতলা ভবনে এই পাঠাগারে প্রায় সাড়ে সাত হাজারের অধিক বিভিন্ন বই রয়েছে। 

কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, আমার ছোট বেলায়ই বই পড়ার প্রচণ্ড ঝোঁক ছিল। এজন্য আমি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছি। আমার মতো যারা গরিব মানুষ তারা তো অর্থের অভাবে বই কিনতে পারেন না। তাই আমি আমার প্রত্যন্ত গ্রামে সবাই যাতে বই পড়তে পারেন এ জন্য এই উদ্যোগটি গ্রহণ করি। স্বপন মিয়ার জন্ম ১৯৯২ সালের ১ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের কালঘড়া গ্রামে। তার বাবা হারুন মিয়া ছিলেন গবাদিপশু চিকিৎসক। 

মাত্র দেড় বছরে তিনি বাবাকে হারান। তিন সন্তান নিয়ে মা রাজিয়া খাতুন তাদের লালন-পালনে এলাকায় মাটি কাটেন। স্বপনের দুই ভাই রিকশা চালাতে শুরু করেন। এমনই কঠিন সময়ে স্বপন এলাকায় ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বই সংগ্রহ করতে শুরু করেন। জীবন-জীবিকার তাগিদে শুরু করেন হকারি, কখনো দিনমজুরের কাজ, কখনো চা বিক্রি, কখনো আচার বিক্রি আর টিউশনি। 

তিনি জীবন যুদ্ধে কখনো থেমে থাকেননি। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি, এইচএসসি পাস করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে পাস করেছেন। বর্তমানে কসবা গোপীনাথপুর শাহ আলম কলেজে প্রভাষক হিসেবে জ্ঞানের আলো বিকাশে মহান পেশা শিক্ষকতায় নিয়োজিত আছেন। স্বপনের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১১টি। নিয়মিত লেখালেখি করেন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায়।

এই পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠার পেছনে ভবন নির্মাণ, বিভিন্ন বই সংগ্রহ, বই পড়ার জন্য ভ্রাম্যমাণ ভ্যানগাড়ি উপহার দেন নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এছাড়াও পৌর মেয়রসহ আরও অনেকে সহযোগিতার হাত বাড়ান। 

এই লাইব্রেরিতে পরিদর্শনে এসেছেন নাট্যব্যক্তিত্ব মরহুম আলী যাকের, সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর, শ্রীকাইল কলেজের অধ্যাপক শ্যামা প্রসাদ ভট্টাচার্য প্রমুখ। এখানে অনেক বইও পাঠিয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মরহুম ড. আকবর আলি খান। এখানে প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বই পড়ার জন্য উন্মুক্ত থাকে। 

এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ক্যারিয়ার আড্ডা, পিঠা উৎসব, ঘুড়ি উৎসব, কম্পিউটার প্রশিক্ষণসহ রয়েছে নিয়মিত সাপ্তাহিক পাঠচক্র, শিক্ষাসামগ্রী প্রদান, জ্ঞানবিষয়ক মাসিক পরীক্ষা, দরিদ্র ও মেধাবী সম্মাননা প্রদান ইত্যাদি। এতে প্রতিদিন অসংখ্য পাঠক বই পড়তে আসেন। এর ব্যাপ্তি ও সুনাম আলোকিত করে অবিরাম চলেছে মানুষজনকে। 

‘এসো বই পড়ি, আলোকিত জীবন গড়ি’— এ স্লোগানকে সামনে নিয়ে এগিয়ে চলেছে এর কার্যক্রম। এটি আরও উন্নত ও এর প্রসারকল্পে সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

Link copied!