নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫, ১২:০২ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫, ১২:০২ এএম
চলতি অর্থবছরের সাত মাসে মাত্র ২১.৫২ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন
সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়নের রেকর্ড
দেশের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধস নেমেছে। চলতি অর্থবছরের সাত মাসে মাত্র ২১.৫২ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। এর চেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়নের তথ্য সরকারি নথিতে নেই। এডিপি বাস্তবায়নে বিগত সাত মাসে ৫৯ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা অর্থছাড় হয়েছে। যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পর সর্বনিম্ন।
গত অর্থবছরের এই সময় ৭৪ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা ছাড় হয়েছিল। আর শুধু গত জানুয়ারি মাসে অর্থছাড় হয়েছে ৯ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। যেখানে আগের অর্থবছরের জানুয়ারি মাসে ছাড় হয়েছিল ১২ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। মূলত বিগত সরকারের দোসর অনেক প্রকল্প পরিচালকই পালিয়ে যাওয়ায় এবং বরাদ্দ কমানোয় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাস জুলাই-জানুয়ারিতে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে রেকর্ড সর্বনিম্ন। আর চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) থেকে ৪৯ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট হচ্ছে। তার মধ্যে সরকারের অংশ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ও বৈদেশিক বরাদ্দ থেকে ১৯ হাজার কোটি টাকা। এর আগে কোনো অর্থবছরে এতো বেশি পরিমাণ অর্থ এডিপি থেকে কাটছাঁট করা হয়নি। শুধু সড়ক-মহাসড়ক বিভাগ থেকেই ১১ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা কাটছাঁটের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরের এডিপির আকার ধরা হয় দুই লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। যদিও গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপির তুলনায় সংশোধিত এডিপির (আরএডিপি) আকার কমেছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এডিপি থেকে বরাদ্দ কমেছিল ১৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে কমেছিল ১৫ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, এডিপি বাস্তবায়ন গতি কম থাকায় অনেক কমেছে সরকারি তহবিলের চাহিদাও। সাধারণত অন্যান্য অর্থবছরের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সরকারি তহবিল থেকে চাহিদা অনেক বেশি থাকে। কিন্তু চলতি অর্থবছরে এডিপিতে যে পরিমাণ সিলিং বেঁধে দেয়া হয়েছে, চাহিদা তার চেয়ে কম। তবে সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে চলতি অর্থবছরে চাহিদার চেয়ে বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান থেকে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার কোটি টাকা চাহিদা দিয়েছিল। কিন্তু সরকার বৈদেশিক অর্থায়ন ব্যবহারের গুরুত্ব দেয়ায় বরাদ্দ বাড়িয়ে ৮১ হাজার কোটি টাকার সিলিং দেয়া হয়।
সূত্র আরও জানায়, দেশের অর্থনীতি সংকটের মধ্যে আছে। রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হচ্ছে। ফলে সরকারকে ব্যয় কমাতে হবে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে অপচয়মূলক ব্যয় কমানোর অনেক সুযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের সামনে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) হচ্ছে খরচ কমানোর বড় জায়গা।
বর্তমানে দেশের অর্থনীতি সংকটের মধ্যে আছে। রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হচ্ছে। ফলে সরকারকে ব্যয় কমাতে হবে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে অপচয়মূলক ব্যয় কমানোর অনেক সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) হচ্ছে বর্তমান সরকারের সামনে খরচ কমানোর বড় জায়গা। যদিও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন বর্তমানে শুরুর পর্যায়ে রয়েছে। সেক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বাদ দিয়ে এডিপি বড় ধরনের কাটছাঁট করলে তেমন কোনো অর্থের অপচয় হবে না। চলতি অর্থবছরে এডিপির আওতায় প্রকল্প রয়েছে এক হাজার ৩২৬টি।
এদিকে অর্থনীতিবিদদের মতে, প্রশ্নবিদ্ধ প্রকল্পগুলো পুনরায় বিবেচনা করা প্রয়োজন। প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন। যেসব মেগাপ্রকল্পের অগ্রগতি ভালো, সেগুলো শেষ করা জরুরি। তবে যেসব মেগাপ্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি বা প্রাথমিক ধাপে আছে, সেগুলো বাদ দেয়া যেতে পারে।
অন্যদিকে সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানান, বিগত সরকার পতনের পর অনেক প্রকল্প পরিচালক পালিয়ে গেছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথমদিকে যাচাই-বাছাই করে প্রকল্প পাস করার উদ্যোগ নেয়া হয়। অতিমূল্যায়িত প্রকল্প, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেয়া প্রকল্পগুলো দেখা হচ্ছে। ওসব করতে গিয়ে উন্নয়ন ব্যয় কম হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে আইএমইডির সাবেক সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন জানান, উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থছাড় কমিয়ে দেয়া হয়েছে। কোন প্রকল্পটি বেশি প্রয়োজনীয়, কোনটির প্রয়োজনীয়তা কম তা যাচাই-বাছাই চলছে। প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।