Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫,

আজহারের মুক্তি ও নিবন্ধন ফেরতের দাবি

রাজপথে জনসমর্থন জানান দিল জামায়াত

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫, ১২:১৩ এএম


রাজপথে জনসমর্থন জানান দিল জামায়াত

আমরা ভদ্র মানুষ, ভদ্ররা শক্ত হলে কেমন হয় তা দেশের মানুষ জানে— জামায়াত আমির

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সংঘটিত আন্তর্জাতিক অপরাধসমূহের বিচারের জন্য ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার তৈরি করে বিতর্কিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রাজনৈতিক উদ্দেশে একের পর এক জামায়াত এবং বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ফাঁসি দেয় ট্রাইব্যুনাল। সে ট্রাইব্যুনালে সবচেয়ে বেশি নেতা হারায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। হাসিনার গঠিত ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ে এখনও জেলে বন্দি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটি এম আজহারুল ইসলাম। ৫ আগস্টের পর ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত নেতারা মুক্তি পেলেও এখনও মুক্তি মিলেনি জামায়াতের এই শীর্ষ নেতার। এবার তার মুক্তির জন্য রাজপথকেই বেছে নিয়েছে জামায়াত।  

শেখ হাসিনার পতনের পর জামায়াত বিভিন্ন জেলায় রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করলেও ১৯০ দিন পর প্রথমবারের মতো গতকাল মঙ্গলবার দাবি আদায়ে রাজধানীর পুরানা পল্টনে কয়েখ লাখ নেতাকর্মী নিয়ে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। 

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ফ্যাসিবাদের অন্যতম সাক্ষী আজহারুল ইসলাম। ফ্যাসিস্টের কেঙ্গারু আদালতের রায়ে আজহারুল ইসলামকে জেলে বন্দি রাখা হয়েছে। সেই ফ্যাসিস্টের পতনের পরও আজাহারের মুক্তির জন্য আমাদের রাজপথে নামতে হবে তা কখনই ভাবিনি। ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী ফ্যাসিবাদের কবলে ছিল। ফ্যাসিবাদের বিপক্ষ রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে হিংস্র প্রথম থাবাটি এসেছিল জামায়াতে ইসলামীর উপর। সব শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে এক এক করে বন্দি করা হয়। সে সময় দলের গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের কাঁধে। তিনি তখন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করছিলেন। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়। 

তিনি বলেন, এক এক করে ১৩টি বছর অতিবাহিত হয়েছে। কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে তিনি এখনো আছেন। বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত হলো, আমাদের প্রশ্ন ফ্যাসিবাদের কঠিন সাক্ষী আজহারুল ইসলাম মুক্ত হলেন না কেন? কোন জিনিসটা তাকে এখনো আটকে রাখতে বাধ্য করেছে? কেন এই বৈষম্য? আমরা তো নিজ থেকে অন্যান্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবি জানিয়েছিলাম। এই উদারতা আমরা দেখিয়েছিলাম। ভবিষ্যতেও এই উদারতা আমরা দেখিয়ে যাব। কিন্তু এটিএম আজহারুল ইসলাম কবে মুক্তি পাবেন, সেটি আমরা জানতে চাই সরকারের কাছে।

তিনি বলেন, আমরা তো চাইনি, কল্পনাও করিনি, এভাবে আমাদের রাস্তায় নামতে হবে আজহার ভাইয়ের মুক্তির দাবিতে। আমরা স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই, তার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত এই সমাবেশ-বিক্ষোভ অব্যাহত থাকবে। আমরা আশা করব, সরকার শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবেন। রাজনীতির মজলুম নেতৃবৃন্দকে যেভাবে একে একে মুক্তি দিয়েছেন তেমনিভাবে এটিএম আজহারুল ইসলামকে মুক্তি দিতে হবে। তিনি বলেন, এটিএম আজহারুল ইসলামের জীবন থেকে এক এক করে ১৩টি বছর হারিয়ে গেছে। এই ১৩টি বছর কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে না। আর ১৩ মিনিটও তিনি জেলের ভেতর থাকুক আমরা তা আর চাই না। 

দলীয় নিবন্ধনের ব্যাপারে সরকারকে হুঁশিয়ার দিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, কেন আমাদের নিবন্ধন আটকে রেখেছেন? আমাদের নিবন্ধন তো জালিম সরকার কেড়ে নিয়েছিল। সেই জুলুম কি আপনারাও আমাদের উপরে করবেন? এ জন্যই কি হাজার হাজার ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে? হাজার হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে? বাংলাদেশের মাটিতে আর কোনো বৈষম্য বরদাস্ত করব না। সব বৈষম্যের কবর রচনা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছর জীবন দিতে যেমন ভয় করেন নাই, গুলির সামনে বুক পেতে দিতেও ভয় করেন নাই, সর্বশেষ জুলাই আন্দোলনের শরিক হতেও ভয় করেন নাই। এই যুদ্ধ চলবে ইনশাআল্লাহ। মেহেরবানি করে আমাদের আর কেউ চোখ রাঙাবেন না। ফ্যাসিবাদের ভাষায় কেউ কথা বলবেন না। কথা বলবেন রাজনীতিবিদের ভাষায়। আমরা অভিনন্দন জানাব। কিন্তু মেহেরবানি করে চোখ রাঙাবেন না। এই সংগঠন কারো চোখ রাঙানি পরোয়া করে না।

তিনি বলেন, অতীতেও দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছিল। ফ্যাসিবাদের ষড়যন্ত্রের পরও সেই ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। তবে সব ষড়যন্ত্র একে একে নস্যাৎ করে দিয়েছেন আল্লাহ। আমরা আশাবাদী আগামীতেও সব ষড়যন্ত্র আল্লাহ ব্যর্থ করে দেবেন ইনশাআল্লাহ। আমরা সব ধরনের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিনের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ৫ তারিখের পর বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার মামলা শেষ করেছেন। বিএনপির চেয়ারপারসনকে জামিন দেয়া হয়েছে। অনেক ফাঁসির আসামিকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। তারপরও কোন অপরাধে আজহারুলকে এখনও বন্দি রাখা হয়েছে? অবিলম্বে আজহারুল ইসলামকে মুক্তি না দিলে এবং জামায়াতের নিবন্ধন ফেরত না দিলে রাজপথে তা আদায় করা হবে। 

জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির সেলিম উদ্দীন বলেন, ১৯০ দিন পর আমরা আবার রাজপথে নেমেছি। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ১৬ বছর আন্দোলন করেছি। ৫ আগস্টের পর আজহারুল ইসলামের মুক্তি ছিল আমাদের অধিকার। এ বিষয়ে আমাদের রাস্তায় আন্দোলন করতে হবে তা আমরা কখনোই ভাবিনি। হাসিনার তৈরি ক্যাঙ্গারু আদালত সারা বিশ্বে গ্রহণ যোগ্যতা হারিয়েছিল। হাসিনার পতনের পর সেই আদালতের দেয়া রায়ে কেউ বন্দি থাকবে তা মানা হবে না। আজহারের যদি মুক্তি না দেয়া হয় তাহলে আমিরে জামায়াতকে অনুরোধ করব লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণার জন্য। মুক্তি না দেয়া হলে পুরো ঢাকা অচল করে দেয়ারও হুমকি দেন তিনি। 

সমাবেশে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, ৫ আগস্টের পর অনেক রাজনেতাদের মুক্তি দেয়া হলেও আজহারুল ইসলামকে মুক্তি দেয়া হয়নি। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন ঘটিয়েছে। আপনারা মুখের ভাষা না বুঝলে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে আজহারুল ইসলামকে মুক্ত করা হবে।  সমাবেশ শেষে জামায়াতে ইসলামীর আমিরের নেতৃত্বে পুরানা পল্টন থেকে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি প্রেসক্লাব, হাইকোর্ট হয়ে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল ও সমাবেশে জামায়াতের ঢাকা মহানগরী ও ঢাকা জেলার নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

Link copied!