নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫, ১১:৪৩ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫, ১১:৪৩ পিএম
চলতি ফেব্রুয়ারি মাসেই শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের সব পাঠ্যবই তুলে দেয়ার সরকারের প্রতিশ্রুতি বিফলে যাওয়ার শঙ্কা বাড়ছে। কারণ প্রথম থেকে দশম শ্রেণির ৪০ কোটি বইয়ের মধ্যে এখনো ছাপাই হয়নি ১২ কোটি বই। আর যেসব বই ছাপা হয়েছে সেগুলোও বাইন্ডিংয়ে যাচ্ছে না। তাছাড়া মুদ্রণ মালিকদের কাছ থেকে কাগজ বাবদ অগ্রিম যে টাকা নেয়া হয়েছে তার বিপরীতে তাদের কাগজ দেয়া হচ্ছে না। ফলে ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষার্থীরা সব বই পাওয়ার সম্ভাবনা মিলিয়ে যাচ্ছে। প্রেস মালিক ও এনসিটিবি সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটি বই দেয়া সম্ভব হয়েছে। বাকি বইগুলো কবে নাগাদ দেয়া সম্ভব তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চুপ। বর্তমানে সরকারি কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একটি মাত্র বই দেয়া হয়েছে। আর মাধ্যমিকের কোনো শ্রেণির তিনটি, কোনো শ্রেণির দুই-একটি, আবার কোনো শ্রেণির কিছু বই পাওয়া গেছে। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেশি বই পেয়েছে।
সূত্র জানায়, এখনো সরকারি বিনামূল্যের ১২ কোটির মতো বই ছাপানো বাকি। আরো তিন কোটি বই ছাপা হলেও বাঁধাই হচ্ছে না। ফলে ১৫ কোটি বই শিক্ষার্থীদের পেতে আরো বিলম্ব হবে। তিন কোটি পাঠ্যবই ছাপার পর বাইন্ডিংয়ের অপেক্ষায় রয়েছে। মূলত লোকসানের ভয়ে বই ছাপার পরও বাইন্ডিংয়ে দেওয়া হয়নি। এক হাজার ফর্মা ইন্টারলিপ করতে বাইন্ডারদের ১৮০ টাকা দিতে হয়। প্রেস মালিকরা তাদের ১৩০ টাকা দিতে চাইলেও। এনসিটিভির পক্ষ থেকে ১৫০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। তাতে প্রেস মালিকদের আরও ৩০ টাকা করে লোকসান হবে। যে কারণে বেশ কিছু প্রেস মালিক ছাপার পরও বই বাউন্ডিংয়ে পাঠাচ্ছে না।
সূত্র আরও জানায়, লোকসানের ভয়ে যেসব প্রেস মালিক ছাপার পর বই বাইন্ডিংয়ের জন্য পাঠাতে গড়িমসি করছে তাদের ব্যাপারে এনসিটিবি ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে। কিন্তু প্রেস মালিকরা বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে সব বই দেয়া সম্ভব হবে না। কারণ পাঠ্যবই সরবরাহের সময় রয়েছে। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগেই পাঠ্যবই দেয়া হবে। তবে এ মাসের মধ্যে সব বই দেয়ার চেষ্টা চলছে। কিন্তু এনসিটিবির মধ্যস্থতায় প্রেস মালিকরা কাগজের জন্য অগ্রিম যে টাকা দিলেও এখন ওই কাগজ পাচ্ছে না। যে কারণে প্রেস মালিকরা ফেব্রুয়ারিতে সব বই দিতে পারবে না। তবে মার্চ মাসের মধ্যে সব বই দিতে পারবে বলে প্রেস মালিকরা আশাবাদী। মূলত বই ছাপানোর দরপত্র বাতিল করে নতুন দরপত্র আহ্বান করায় পাঠ্যবই সরবরাহের সময় পিছিয়ে যায়। ফলে এ বছর শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবই সময়মতো পাচ্ছে না। কিন্তু সরকার নির্ধারিত সময়ের আগেই বই চায়। আর সরকার ও শিক্ষার্থীদের বিষয়টি বিবেচনা করে প্রেস মালিকরা দ্রুত বই সরবরাহের চেষ্টা করছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান জানান, সপ্তম শ্রেণির বই প্রায় শতভাগ চলে গেছে। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির বই ৪৯ শতাংশ গেছে। প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির শতভাগ বই চলে গেছে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বইও শিগগির চলে যাবে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির বইগুলোর ফর্মা সংখ্যা কম হওয়ায় ছাপাতে বেশি সময় লাগবে না।
প্রেস মালিকরা যদি বাইন্ডিং হাউজে বই নিয়ে যায় তাহলে সব বই আগামী ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সারা দেশে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে।