Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫,

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান

সংকট মোচনের নায়ক থেকে উন্নয়নের রূপকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫, ১২:০৬ এএম


সংকট মোচনের নায়ক থেকে উন্নয়নের রূপকার
  • বদলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের গতিপথ

  • স্বাধীনতা থেকে উন্নয়ন জিয়াউর রহমানের অনন্য নেতৃত্ব

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নেতা, যিনি স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে জাতীয় উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তার বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা, বিশেষ করে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা, তাকে জাতির ইতিহাসে চিরস্মরণীয় করে তুলেছে। শুধু স্বাধীনতা অর্জনেই নয়, বরং স্বাধীনতার পর দেশকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে স্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে তার দূরদর্শী নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন এবং দেশের অর্থনীতিকে আত্মনির্ভরশীল করতে কৃষি, শিল্প ও অবকাঠামো খাতে যুগান্তকারী সংস্কার কার্যক্রম চালু করেন। শিক্ষা খাতে ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে কারিগরি ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার সম্প্রসারণ ঘটান, যা পরবর্তীতে জাতীয় উন্নয়নের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তিনি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করে বাংলাদেশের অবস্থান সুসংহত করেন। দেশপ্রেম, উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার প্রতীক শহীদ জিয়াউর রহমানের অবদান আজও বাংলাদেশে প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুভূত হয়। তার সাহসী নেতৃত্ব ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড জাতির অগ্রযাত্রায় স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে। 

বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে পরিচিত করতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন এক ‘কালজয়ী চরিত্র’। তার অদম্য সাহস, মেধা ও দেশপ্রেমের স্বাক্ষর রেখেছেন স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের প্রতিটি স্তরে। 

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ জিয়ার অবদান : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাত্রিতে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের পর তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।

২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। মুক্তিযুদ্ধে ৮ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে নেতৃত্ব দেন এবং পরবর্তীতে জেড ফোর্স গঠন করেন। যুদ্ধের পর ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত হন।

রাজনীতিতে অবদান : ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনেন। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তীতে অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল হয়ে ওঠে। বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন : ‘স্বনির্ভর বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে কৃষি ও শিল্প খাতে ব্যাপক সংস্কার করেন। কৃষি উন্নয়নের জন্য সেচ ব্যবস্থা, সার ও কৃষি ঋণ সহজলভ্য করেন। জুট ও টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানা পুনরায় চালু করেন, যা অর্থনীতির চাকা সচল করে। রপ্তানি খাত প্রসারে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং তৈরি পোশাকশিল্পের বিকাশে সহায়তা করেন।

সামরিক খাতে অবদান : সামরিক বাহিনীতে আধুনিকায়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক সংস্কার করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর জন্য নতুন সরঞ্জাম সংগ্রহ করেন। সীমান্ত রক্ষার জন্য বিজিবি (সাবেক বিডিআর) ও আনসার বাহিনীকে শক্তিশালী করেন।

শিক্ষা সংস্কারে অবদান : দেশে ব্যাপক শিক্ষা সংস্কার করেন এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার সমপ্রসারণ করেন। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষার প্রচলন করেন, যা তরুণদের কর্মসংস্থানে সহায়ক হয়। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে একাডেমিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন।

যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত সংস্কার : জাতীয় মহাসড়ক ও গ্রামীণ সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন করেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক নির্মাণ করেন। নতুন নতুন ব্রিজ ও রেললাইন স্থাপনের মাধ্যমে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করেন।

বৈদেশিক নীতি ও কূটনীতিতে অবদান : স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করে দেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করেন। ওআইসি, ন্যাম ও জাতিসংঘের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ও বাণিজ্য বৃদ্ধিতে কাজ করেন।

খাদ্য নিরাপত্তায় অবদান : দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে ‘সবুজ বিপ্লব’ কার্যক্রম চালু করেন। হাইব্রিড ও উন্নত জাতের ধান চাষ এবং কৃষকদের জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করেন। নতুন সেচ প্রকল্প চালু করে চাষাবাদের জন্য পানির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করেন।

সামাজিক উন্নয়নে অবদান : নারীর ক্ষমতায়নে উদ্যোগ নেন এবং নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেন। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করেন, যার মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে উন্নয়ন নিশ্চিত হয়। খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চায় সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করেন।

জ্বালানি খাতে অবদান : দেশের বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেন। পল্লী বিদ্যুতায়ন প্রকল্প গ্রহণ করেন, যা গ্রামীণ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গ্যাস ও খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান ও ব্যবহারে উদ্যোগ নেন।  

সর্বোপরি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের উন্নয়নে এক যুগান্তকারী নেতা ছিলেন। তার দূরদর্শী নেতৃত্ব, সংস্কারমুখী পদক্ষেপ ও জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

Link copied!