জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫, ১২:০৮ এএম
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫, ১২:০৮ এএম
‘আওয়ামী লীগের দোসররা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে’
‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই’
‘ছিনতাই রোধে মাঠে নামছে পুলিশের তিন বিশেষায়িত ইউনিট’
‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়টি সরকার সিরিয়াসলি নিয়েছে’
চাঁদাবাজির ঘটনায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে বেশ কয়েকদিন ধরেই। সাধারণ মানুষও এতে ক্ষুব্ধ, বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা খুবই অতিষ্ঠ। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। প্রকাশ্যে চাঁদা দাবি, ছিনতাইয়ে ধারালো অস্ত্র ব্যবহারের পাশাপাশি গুলির ঘটনা ঘটছে। সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ব্যবসায়ীদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে চুক্তিভিত্তিক চাঁদা দিতে।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে রাজধানী পরিণত হয় আতঙ্কের নগরীতে। রাত ৮টার দিকে ধানমন্ডির শংকরে একদল সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। ফলে ওই এলাকার ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে একই রাতে বনশ্রী এলাকায় ব্যবসায়ীকে গুলি করে স্বর্ণালংকার ও টাকা ছিনতাই করে অস্ত্রধারীরা। ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। রাজধানীর গোড়ানে একজনকে কুপিয়ে সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।
রাত ১টার দিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে ঢাবিতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এসব ঘটনা নিয়ে ওই রাত ৩টার দিকে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আসেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। মধ্যরাতের পর সংবাদ সম্মেলন ডাকা নিয়েও দেশজুড়ে বেশ সমালোচনা তৈরি হয়। এদিকে কক্সবাজারে বিমান বাহিনীর ঘাঁটিতে হামলার ঘটনা ঘটে। সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে সেনা বাহিনী প্রধান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নির্দেশনা দেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিকালে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় কোর কমিটির সভা। সভা শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানান, ঢাকাসহ সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যৌথবাহিনীর কম্বাইন্ড টহল চলবে। যা ২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয়েছে।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে ধানমন্ডির শংকর আলী হোসেন বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ১০ থেকে ১২ জনের একদল সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। এতে ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা মসজিদে মাইকে ঘোষণা দেন যে, মহল্লায় ডাকাতদল প্রবেশ করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা গণমাধ্যমকে জানায়, দলটি আশপাশের দোকানগুলোতে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছিল। আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা দ্রুত দোকান বন্ধ করে দেন এবং সাধারণ মানুষ নিরাপদ স্থানে চলে যান। প্রায় পাঁচ-দশ মিনিট অবস্থান করার পর সশস্ত্র দলটি এলাকা ত্যাগ করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, এলাকাবাসী নিরাপত্তার জন্য পুলিশের সহযোগিতা চান। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
ডিএমপি ধানমন্ডি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান বলেন, ধানমন্ডি এলাকায় কয়েকটি মোটরসাইকেলে ১৫-২০ জন তরুণ আসে। তবে তাদের হাতে কোনো অস্ত্রশস্ত্র ছিল না। এছাড়া ধানমন্ডি এলাকায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তিনি আরও বলেন, ওইদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে ১৫-২০ জন তরুণ ধানমন্ডির শংকর এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় হাজী ইউসুফ হাইস্কুলের পাশের গলির মুখে চা খাওয়ার জন্য দাঁড়ান। এ সময় নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন। এটা দেখে পাশের কোনো ব্যক্তি মসজিদের মুয়াজ্জিনকে বলেন এখানে ডাকাত এসেছে। তারপর সে নিজের মতো করে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেন। এরপরই ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে আশপাশের সিসিক্যামেরার ফুটেজ যাচাই করে। সেখানে দেখতে পায় এসব তরুণের হাতে কোনো ধরনের অস্ত্র নেই। তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে চলে যান।
২৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর রামপুরার বনশ্রী ডি ব্লক ৭ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়ির সামনে আনোয়ার হোসেন (৪৩) নামের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় তার কাছে থাকা প্রায় ২০০ ভরি স্বর্ণ ও নগদ এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় অস্ত্রধারীরা। পাশের ভবন থেকে ছিনতাই ও গুলির দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও করেন বাসিন্দারা। রাতেই তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা গেছে, তিনজন মোটরসাইকেল থেকে নেমে ব্যবসায়ী আনোয়ারের কাছ থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। তিনি ব্যাগ ছাড়ছেন না। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে একজন তাকে গুলি করেন। পরে ব্যাগ ছিনিয়ে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায় তারা।
গুলিবিদ্ধ আনোয়ারের স্বজনরা জানান, আনোয়ারের ব্যাগে ২০০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ এক লাখ টাকা ছিল। তাদের ধারণা দোকান থেকেই তাকে অনুসরণ করেছিল দুর্বৃত্তরা। এরপর বাসার সামনে পৌঁছামাত্র স্বর্ণ ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
রামপুরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মশিউল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, গুলিবিদ্ধ আনোয়ারকে প্রথমে বনশ্রীর ফরাজী হাসপাতালে এবং পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। আনোয়ারের একজন বন্ধু জানান, বনশ্রীর সি ব্লকের ৫ নম্বর সড়কে ‘অলংকার জুয়েলার্স’ নামে জুয়েলারির দোকান রয়েছে আনোয়ারের। প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি স্বর্ণের ব্যবসা করছেন। ডি ব্লকের ৭ নম্বর রোডে ২০ নম্বর বাড়িতে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় হেঁটে যাতায়াত করেন। প্রতি রাতের মত রোববার রাতেও দোকানে থাকা ২০০ ভরি স্বর্ণের গহনা ব্যাগে নিয়ে হেঁটে বাসায় ফিরছিলেন। ভবনের গেটের কাছে যাওয়া মাত্র তিনটি মোটরসাইকেল তাকে ঘিরে ধরে। তাকে কুপিয়ে ও গুলি করে স্বর্ণের ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। তাতে নগদ এক লাখ টাকাও ছিল। মজিবুর রহমান আরও বলেন, আনোয়ারের শরীরে চারটি গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এছাড়া অন্তত ৬ স্থানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাকে।
ঢাবিতে বিক্ষোভ : বনশ্রী ও মোহাম্মদপুরে দুর্ধর্ষ ছিনতাইয়ের ঘটনায় ২৩ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ১টা ১০ মিনিটে তাৎক্ষণিক হল ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সারা দেশে ধর্ষণ, ছিনতাই ও ডাকাতির প্রতিবাদে রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পদত্যাগের দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভে তারা ‘জুলাইয়ের রক্তের দাম চাই, নিরাপদ দেশ চাই’, ‘সারা দেশে অপরাধ কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘এক দুই তিন চার, জাহাঙ্গীর গদি ছাড়’, ‘দফা এক দাবি এক, জাহাঙ্গীরের পদত্যাগ’, ‘মা বোনদের নিরাপত্তা দে, নইলে গদি ছাইড়া দে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বেশ কয়েকটি বড় অপরাধের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এগুলো প্রতিরোধে কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ আমরা দেখিনি। আজও মোহাম্মদপুর, বনশ্রী, ধানমন্ডিতে ছিনতাইকারী ও ডাকাতদের উপদ্রব ছিল। কেউ বাসা থেকে বের হতে নিরাপদবোধ করছেন না, মানুষ আতঙ্কবোধ করছেন। এমন পরিস্থিতিতে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে হবে। মিছিলে থাকা এক শিক্ষার্থী বলেন, সারা দেশে ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ব্যর্থতার জন্য আমরা তার পদত্যাগ দাবি করছি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার জরুরি সংবাদ সম্মেলন : রাত ৩টার দিকে বারিধারার ডিওএইচএসে নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের দোসররা দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করেছে। তারা প্রচুর টাকা দেশ থেকে স্থানান্তর করেছে। এখন সেই টাকা ব্যবহার করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। আমরা এটা কোনো অবস্থাতেই করতে দেব না। আমরা যেভাবেই হোক এটা প্রতিহত করব। দিনে-রাতে যেখানেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োজন হবে, তারা সেখানে যাবে এবং প্রতিহত করবে।
‘আওয়ামী লীগের দোসররা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে’
আওয়ামী লীগের দোসররা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গত রোববার মধ্যরাতে রাজধানীর বারিধারা ডিওএইচএসের নিজ বাসায় জরুরি সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের দোসররা দেশ থেকে অনেক টাকা স্থানান্তর করেছে। এখন পাচার করা সেই টাকা ফিরিয়ে এনে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তিনি আরও বলেন, আমরা এটা কোনো অবস্থাতেই করতে দিব না। যেভাবেই হোক প্রতিহত করব। তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে। উপদেষ্টা বলেন, সোমবার থেকে দিনে বা রাতে যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োজন হবে, সেখানেই তারা যাবে এবং তারা সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল বাড়বে। যেখানেই ঘটনা ঘটবে সেখানেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কারো গাফিলতি পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আওয়ামী লীগ দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার সব ধরনের চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে তারা প্রচুর টাকা ব্যবহার করছে। তবে, আমরা শক্ত হাতে তাদের প্রতিহত করব। আওয়ামী লীগের যারা এসব কাজ করছে, তাদের ঘুম হারাম করে দেব। তারা কোথাও স্থান পাবে না। দিনে বা রাতে তাদের কোথাও স্থান হবে না।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছি, আগামীকাল থেকে পুলিশ টহল কার্যক্রম আরো বৃদ্ধি করবে। আমরা টহল টিমকে কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছি। আওয়ামী লীগের দোসরদের কোনো ছাড় দেব না।
দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিনে দিনে আরও উন্নতি হবে। এটা অবনতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। দেশকে যারা অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে, তাদের আমরা কোনোভাবেই ছাড় দেব না।’ ছিনতাই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনায় আওয়ামী লীগের দোসররা জড়িত। বনশ্রী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছে। তাদেরও যদি কোনো গাফিলতি থাকে আমরা ব্যবস্থা নেব।
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তারা চাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি। আমি যদি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও উন্নতি করতে পারি তাহলে তো পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রতিদিন গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। গ্রেপ্তার কিন্তু হচ্ছে। বাসে ডাকাতির ঘটনায় গতকাল রাতে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার অভিযান চলমান থাকবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা ঠিক মতোই দেয়া হয়েছে। তারা কাজ করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কাজ করছে বলেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘অপারেশন ডেভিল হান্টের মাধ্যমে গ্রেপ্তার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। সন্ত্রাসীরা কোথাও কোনো জায়গায় যেন ঘুমাতে না পারে, বসতে না পারে, দাঁড়াতে না পারে, সেই ব্যবস্থা আমরা করব।’ নতুন করে আর যাতে কোনো ঘটনা না ঘটে সেজন্য মোটরসাইকেলে হেলমেট পরিহিত দুজনের বেশি আরোহী চলতে পারবে না বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই’
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমন না যে আমাদের খুব আত্মতুষ্টির স্কোপ আছে। আমাদের আত্মতুষ্টির স্কোপ নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি গত ৬ মাসে মাঝে মাঝে ভালো হয়েছে। মাঝে মাঝে খারাপ হয়েছে। যখন খুব খারাপ কিছু হয়। আমরা প্রচণ্ড আত্মজিজ্ঞাসার সম্মুখে পড়ি। খুবই খারাপ লাগে।
গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী নগরীর ভেড়িপাড়া এলাকার পিটিআই মিলনায়তনের সামনে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
এর আগে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল রাজশাহী পিটিআই মিলনায়তনে ‘দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ’ বিষয়ক কর্মশালায় যোগ দেন।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন আমার অত্যন্ত একটি চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছি। আমাদের ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর দিয়ে একটা নতুন শাসনব্যবস্থার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। নতুন রাষ্ট্র সংস্কারের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে সে সময় যে গণহত্যাগুলো হয়েছিল, সেটার বিচারের সুযোগ ও সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া এখানে অতীতে অনেক গায়েবি মামলা হয়েছে। আমরা সামগ্রিকভাবে দেখতে এসেছি, এখানে যারা স্টেক হোল্ডার আছে, ডিসি, ইউএনও, ওসি, পুলিশ প্রশাসন আছে, বিচারকরা আছেন তারা যেন সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শক্ত প্রমাণ আছে। যাদের বিরুদ্ধে অপরাধের জড়িত থাকার সাক্ষ্য প্রমাণ আছে, তাদের ব্যাপারে যেন যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয়। আবার কেউ যেন অযথা হয়রানির মধ্যে না পড়ে। উনারা যেন সবগুলো প্রতিষ্ঠান সমন্বিতভাবে একসঙ্গে জোরালোভাবে কাজ করতে পারে। মানবাধিকার রক্ষা করে বিচারের যে পরিস্থিতি, পরিবেশ সেটা সুনিশ্চিত করতে পারে। সেই লক্ষ্যে যেন কাজ করতে পারে। সেরকম দিক নিদের্শনা দেয়া। মতবিনিময় করে উনাদের সমস্যাগুলো শোনা। এ ব্যাপারে করণীয় নিয়ে আলোচনা করতে এসেছি।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা ধ্বংসপ্রাপ্ত কিছু প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করছি। বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসন। আপনারা জানেন তাদের ট্রেনিংয়ের ক্ষেত্রে কী ঘাটতি ছিল। তাদের দায়িত্বপালনেক কিছু ব্যর্থতা থাকতে পারে। পুলিশ, বিচার প্রশাসন সবক্ষেত্রে আমরা বলতে চাই, আমরা ধ্বংস হওয়া প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ শুরু করেছি। এটা বড় চ্যালেঞ্জ। যারা প্রকৃত ফ্যাসিস্ট শক্তি আছে এরা মেজোরেটি তো দেশে থেকে গেছে। এদের হাতে হাজার হাজার কোটি টাকা। এটা তো বানানো কথা না। টাকা থাকলে, বদ মতলব থাকলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করার মতো অনেক কিছু করা যায়। তাদের একটা রুল থাকতে পারে। আছেও বলে আমরা অনেকেই বিশ্বাস করি। এছাড়া যারা স্বভাবগত অপরাধী তাদেরও ভূমিকা আছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ব্যর্থতা আছে এটা কোনোরকম অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আমাদের এই ব্যর্থতা উত্তরণের জন্য প্রচণ্ড তাড়না ও চেষ্টা আছে। আমরা চেষ্ট করছি। আপনারা জানেন যে, বিপ্লব উত্তর পরিস্থিতিতে পৃথিবীর কোনো দেশেই শাসনকার্য চালানো খুব সহজ ব্যাপার না।
ছিনতাইরোধে মাঠে নামছে পুলিশের তিন বিশেষায়িত ইউনিট : আইজিপি
ছিনতাইরোধে পুলিশের তিনটি বিশেষায়িত ইউনিট মাঠে নামবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী নগরীর ভেড়িপাড়া এলাকার পিটিআই তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
পুলিশের আইজিপি বাহারুল আলম বলেছেন, অপরাধের সংখ্যা বেড়েছে, বিশেষ করে রাতকালীন ছিনতাই। ছিনতাই হচ্ছে বিষয়টি আমরা নোটিশে নিয়েছি। শুধু গত রাতে নয়, তার আগের রাতেও বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। আমরা এটা ধারণা করে শনিবারে সকালে বিশেষ একটি ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, এন্টি ট্যুরিজম ইউনিট ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ- তিন অর্গানাইজেশন মিলে ইনটেনসিভ পেট্রোলিং করবে। আজকে থেকে এটা বাস্তবায়িত হবে আশা করছি। আমরা দেখি এভাবে পরিস্থিতি উন্নতি হয় কিনা না।
ছিনতাইগুলোতে রাজনৈতিক কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা এমন কথার উত্তরে তিনি বলেন, এটা তদন্তে বোঝা যাবে। গতকাল র্যাব একজন ছিনতাইকারীকে ধরেছে। সরাসরি ছিনতাইয়ের সময় নয়, তবে তার আস্তানায় গিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করেছে। তার থেকে চাপাতি, ছুরি, লাখ টাকা পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
অপারেশন ডেভিল হান্ট নিয়ে তিনি বলেন, ডেভিল হান্ট হচ্ছে যারা সন্ত্রাসী, সমাজ বিরোধী তাদের বিরুদ্ধে। আমরা শুরু করেছিলাম বেশ কিছুদিন আগে। সারা দেশব্যাপী এটা হচ্ছে। এখন ঢাকা মহানগরের ক্রাইম একটু ডিফারেন্ট। সারা দেশের চিত্রের সঙ্গে মেলে না। এটার জন্য আলাদা পরিকল্পনা গ্রহণের চেষ্টা করছি। আপনারা আমাদের জানান। আমরা সোশ্যাল মিডিয়া থেকেও খবর পাচ্ছি।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়টি সরকার সিরিয়াসলি নিয়েছে : প্রেস সচিব
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির খুব দ্রুত দৃশ্যমান উন্নতি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, আমরা চাই বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যত দ্রুত সম্ভব উন্নতি করা। মানুষের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব হচ্ছে সরকারের। আমরা এ কাজটি সুচারুভাবে করতে চাই।
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
সরকার দেশের চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন কি না- এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সিরিয়াসলি নিচ্ছে বলেই মিটিংটা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে যে এজেন্সিগুলো কাজ করে তারা সবাই এখানে ছিলেন।
বৈঠকের বরাত দিয়ে শফিকুল আলম বলেন, ঢাকা এবং যেসব জায়গায় আমরা দেখছি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিছুটা অবনতি হয়েছে, সেসব জায়গায় টহল বাড়াবো। এই টহল আজকে (সোমবার) সন্ধ্যা থেকে আপনারা দেখবেন। পুরো ঢাকা শহরেই দেখবেন।
তিনি বলেন, এজন্য যে জিনিসটি করা হচ্ছে, যৌথ টহল হবে। পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ টহল হবে। জায়গায় জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মনিটর করা হবে। তল্লাশির ব্যবস্থা করা হবে।
গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, আমাদের ইন্টেলিজেন্স উইং, ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি- তারা তাদের মতো করে নজরদারি করবেন। সে অনুযায়ী আমরা অ্যাকশনে যাবো।
কক্সবাজারে বিমান বাহিনীর নির্মাণাধীন ঘাঁটিতে হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, কক্সবাজারের এসপি এবং যে নিরাপত্তা এজেন্সিগুলো রয়েছে তাদের কাছে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে, তারা প্রতিবেদন দিলে আপনারা জানবেন।
ঢাকার মতো যানজটপ্রবণ শহরে যে কোনো ঘটনার পর ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য শিগগির প্রচুর সংখ্যক নতুন মোটরসাইকেল কেনা হবে বলেও জানান শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, পুলিশের ক্ষেত্রে আপাতত ১০০ মোটরসাইকেল কেনা হচ্ছে, পরবর্তী সময়ে আরও ১০০ কেনা হবে। অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর যারা আইনশৃঙ্খলা কাজে নিয়োজিত, তাদের জন্য আরও ৫০টি করে মোটরসাইকেল নেয়া হবে।