নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫, ১২:২০ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫, ১২:২০ এএম
আ.লীগকে ক্ষমতায় রাখতে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল পিলখানা হত্যাকাণ্ড—অ্যাটর্নি জেনারেল
দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার মেরুদণ্ড ভেঙে দিতেই বিডিআর হত্যাকাণ্ড—সাবেক সেনা কর্মকর্তারা
আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’। পিলখানা বিডিআর সদরদপ্তরে হত্যাযজ্ঞের ১৬ বছর। ১৬ বছর আগে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি) সদর দপ্তর ঢাকার পিলখানায় রহস্যময় এক বিদ্রোহের নামে বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা বর্বরোচিত ও নির্মম হত্যার শিকার হন। সব মিলিয়ে ওই ঘটনায় ৭৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এদিকে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক পরিপত্রের মাধ্যমে রোববার এ ঘোষণা দেয়া হয়। পরিপত্রে বলা হয়েছে, সরকার প্রতিবছর ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং ওই দিন ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ (সরকারি ছুটি ব্যতীত) পালনের জন্য ‘গ’ শ্রেণিভুক্ত দিবস হিসেবে অন্তর্ভুক্তকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এই সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাকে অনুরোধ করা হয়েছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, বাংলাদেশের ওপর আধিপত্যবাদী শক্তির দখলদারিত্ব কায়েমের জন্য আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল পিলখানা হত্যাকাণ্ড।
তিনি বলেন, এটি কোনো বিদ্রোহ ছিল না, ছিল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। পিলখানা হত্যাকাণ্ডে আমরা জাতির সূর্য সন্তানদের হারিয়েছি। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ভিতকে আঘাত করা হয়েছে। ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের কবর রচনা করে নৈরাজ্যবাদের জন্ম দিয়েছিল পতিত আওয়ামী লীগ সরকার।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা বিডিআরের পোশাক পরে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ডদের অনেকেই এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। তাদের বিচারের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। বহুল আলোচিত পিলখানা ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। এর মধ্যে হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। দেশের বিচারিক ইতিহাসে কোনো মামলায় বহু আসামি নিয়ে এটিই একমাত্র মামলা। রাজধানীর পুরান ঢাকায় আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে হত্যা মামলাটির বিচার সম্পন্ন হয়। বিচারিক আদালত ওই মামলায় ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করে। খালাস পান ২৭৮ জন। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাইকোর্টে। তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত একটি লার্জার বেঞ্চে হাইকোর্টে মামলায় ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর রায় হয়। উচ্চ আদালতের রায়ে ১৩৯ আসামির ফাঁসির রায় বহাল রাখা হয়।
যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরও ২২৮ জনকে দেয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন। হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন। অন্যদিকে, হাইকোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আবেদন এখন শুনানির অপেক্ষায়।
বিস্ফোরক আইনের মামলা
ওই ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ আসামির বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম চলছে। বিস্ফোরক আইনের মামলা পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে ২০ জন স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
নিয়োগপ্রাপ্তরা হলেন- অ্যাডভোকেট মো. বোরহান উদ্দিন, ফরহাদ নিয়ন, জাকির হোসেন ভূঁইয়া, মোসাম্মৎ রোভানা নাসরিন শেফালী, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন, মো. মহিউদ্দিন চৌধুরী, মো. শফিউল বশর সজল, গোলাম মোক্তাদির উজ্জ্বল, হান্নান ভূঁইয়া, মো. আব্দুল লতিফ, মো. মেহেদী হাসান জুয়েল, মো. হেলাল উদ্দিন, গাজী মাশকুরুল আলম সৌরভ, মো. জিল্লুর রহমান, মাহফুজার রহমান ইলিয়াস, মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী, মো. মেহেবুব হোসেন, মো. মিজানুর রহমান শিহাব, মো. খুরশিদ আলম ও আজগর হোছাইন। তাদের নিয়োগাদেশে বলা হয়, ‘লালবাগ (ডিএমপি) থানার মামলা নম্বর ৬৫, তারিখ ২৮/০২/২০০৯ থেকে উদ্ধৃত বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) বিস্ফোরক দ্রব্য মামলা পরিচালনা করার জন্য ২০ জন আইনজীবীকে পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত নিয়োগ করা হলো।’ বিস্ফোরক আইনের মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর অস্থায়ী আদালতে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়ার আদালতে মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে। হত্যা মামলাটিতে খালাস ও জামিন প্রাপ্ত আসামিরা এ আদালত থেকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় জামিন পেয়ে চলতি মাসে কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করেছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরশাসন ও ফ্যাসিবাদের পতন হয়। পতন হয় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের। ওইদিন দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার তদন্ত পুনরায় শুরুর দাবি ওঠে। গত ১৯ ডিসেম্বর অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যান শহীদ পরিবারের সদস্যরা। ওই হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্তের জন্য গত ২৪ ডিসেম্বর আ ল ম ফজলুর রহমানকে প্রধান করে ৭ সদস্যের একটি কমিশন গঠন করে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে সরকার। এই কমিশন এখন কাজ করছে।
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের সত্য উদঘাটনই পুনঃতদন্তের লক্ষ্য
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের সত্য উদঘাটনে কমিশন ‘সুশৃঙ্খল’ পদ্ধতিতে কাজ করছে। এ কথা জানিয়েছেন কমিশনের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এএলএম ফজলুর রহমান।
অন্তর্বর্তী সরকার তৎকালীন আধাসামরিক বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর)-এর সদর দপ্তরের অভ্যন্তরে ২০০৯ সালের হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্তে ‘জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন’ গঠন করেছে। এর লক্ষ্য হত্যাকাণ্ডের পেছনের সত্য উদঘাটন করা।
ফজলুর রহমান বলেন, ‘১৬ বছর আগে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার সত্য উদঘাটন করা জটিল কাজ, তবে কমিশন ‘সুশৃঙ্খল’ পদ্ধতিতে এগিয়ে যাচ্ছে’।
বিডিআর বিদ্রোহের বেশ কয়েক বছর আগে আধাসামরিক সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে নেতৃত্ব দেয়া অবসরপ্রাপ্ত এ জেনারেল আরো বলেন, কমিশন রক্তাক্ত সেই বিদ্রোহের পাঁচটি প্রাসঙ্গিক বিষয়ের ওপর দৃষ্টি রেখে যাবতীয় প্রয়োজনীয় প্রমাণ সংগ্রহের জন্য কাজ করছে।
তিনি বলেন, প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে- পিলখানা হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ধরন উদঘাটন, বিডিআর-এ ডেপুটেশনে কর্মরত ৫৭ জন সামরিক কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যায় ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত এ ঘটনার প্রকৃত অপরাধী, সহযোগী, ষড়যন্ত্রকারী, প্রমাণ ধ্বংসকারী এবং উসকানিদাতাদের চিহ্নিতকরণ।
রহমান বলেন, কমিশন ঘটনার সাথে সম্পর্কিত সম্ভাব্য দেশি-বিদেশি উভয় কারণই খতিয়ে দেখবে এবং এ হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য অপরাধ প্রতিরোধে ব্যর্থতার জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করবে।
তিনি আরও বলেন, ‘কমিশনকে ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে তার কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এবং এ পর্যন্ত আমরা ৪১ কার্যদিবসে ৩৭ জনের সাক্ষ্য রেকর্ড করতে সক্ষম হয়েছি’।
পুনঃতদন্ত প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, কমিশনের সামনে এখন পর্যন্ত যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন, তিনজন লেফটেন্যান্ট জেনারেল, দু’জন মেজর জেনারেল, পাঁচজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, চারজন কর্নেল, চারজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল, সাতজন মেজর, দু’জন ক্যাপ্টেন, সাতজন বিডিআর সৈনিক এবং বিদ্রোহে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের তিনজন সদস্য।
গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর একজন পুলিশ সদস্য ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন অধ্যাপকসহ সাবেক সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের নিয়ে এ স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়।
ফজলুর রহমান বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমরা আমাদের কাজ শেষ করার আশা করছি, তবে প্রয়োজন হলে আমরা হয়তো আরও কিছু অতিরিক্ত সময় নিতে পারি’।
উল্লেখ্য, বিদ্রোহের পরপরই আধাসামরিক বাহিনী বিডিআর-এর ব্যাপক পুনর্গঠন করা হয়। পোশাক এবং লোগো পরিবর্তনসহ বিডিআর-এর নাম পাল্টে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’ রাখা হয়।
আগের তদন্তে বিদ্যমান দণ্ডবিধি আইনের অধীনে বিশেষ দায়রা আদালতে বেশ কয়েকজন সাবেক বিডিআর কর্মীর বিচার করা হয়েছিল এবং সীমান্ত বাহিনীর জন্য প্রযোজ্য তৎকালীন আইন অনুযায়ী তুলনামূলকভাবে ছোটখাটো অপরাধীদের বিচার বিডিআর আদালতে করা হয়েছিল।
রহমান বলেন, কমিশন তার কাজের অংশ হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তৎকালীন সেনাপ্রধান (অবসরপ্রাপ্ত) জেনারেল মঈন ইউ আহমেদের সাথে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, যেহেতু এ মুহূর্তে তারা দেশের বাইরে অবস্থান করছেন সে কারণে কমিশন এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিদেশি দূতাবাসগুলোর সাথে যোগাযোগ করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে।
রহমান আরও বলেন, ‘বিদ্রোহ সংঘটিত হওয়ার সময় মঈন উদ্দিন আহমেদ সেনাপ্রধান ছিলেন। কেন অভিযানটি ব্যর্থ হয়েছিল এবং এত মানুষ ও সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়েছিল তা জানতে আমাদের তাকে এবং এ বিষয়ে তার বক্তব্য প্রয়োজন’।
তবে কমিশন এই দুই ব্যক্তির সাথে কথা বলার ক্ষেত্রে বিদ্যমান সব চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে অবগত আছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, কমিশন সরকারকে ‘কিছু লোকের’ বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে অনুরোধ জানিয়েছে, কারণ কমিশনের তাদের সাথে কথা বলার প্রয়োজন হতে পারে।
হত্যাকাণ্ডের পরপরই এ বিষয়ে অনুষ্ঠিত দুটি তদন্ত প্রতিবেদন কমিশন আমলে নেবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা ইতোমধ্যে দুটি কমিটি যেসব প্রতিবেদন তৈরি করেছে সেসব পেয়েছেন।
দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার মেরুদণ্ড ভেঙে দিতেই বিডিআর হত্যাকাণ্ড : সেমিনারে বক্তারা
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের নিরাপত্তা চরমভাবে হুমকির সম্মুখীন হয়েছে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও সিভিল সোসাইটির সদস্যরা।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে গতকাল ‘বিডিআর হত্যাকাণ্ড : বাংলাদেশের নিরাপত্তার ওপর প্রভাব’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব বলেন তারা।
প্রফেসর কে. আলী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত এই সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ড. লে. কর্নেল (অব.) শেখ আকরাম আলী। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা।
মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এইচআরএম রোকন উদ্দিন, পিএসসি, পিএইচডি বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের নিরাপত্তা চরমভাবে হুমকির সম্মুখীন হয়েছে এবং এই ঘটনা শুধু আমাদের দেশেই নয়, সমগ্র অঞ্চলের নিরাপত্তা কৌশলে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।
বিশেষ অতিথি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সালজার রহমান বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ড ছিল পূর্বপরিকল্পিত একটি গণহত্যা, যা আমাদের প্রতিবেশী দেশ ২০০১ সালে বিএসএফ হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতে এবং বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে ঘটিয়েছে।
আরেক বিশেষ অতিথি অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ মাসুম বলেন, ভারত কখনোই চায়নি বাংলাদেশ একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে শক্তিশালীভাবে টিকে থাকুক। স্বাধীনতার পর থেকেই তারা আমাদের আন্তর্জাতিক ইমেজ নষ্ট করতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে আসছে। প্রধান অতিথি সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে বিভিন্ন সংকটে পড়েছে, বিশেষ করে রাজনীতি ও নিরাপত্তার দিক থেকে। আমাদের ভারতীয় ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সবসময় সজাগ থাকতে হবে।
সেমিনারের সভাপতি অধ্যাপক ড. লে. কর্নেল (অব.) শেখ আকরাম আলী বলেন, জাতীয় ঐক্যই আমাদের সব সংকট ও ভারতের নিরাপত্তা হুমকি থেকে রক্ষা করতে পারে। আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুসংহত করতে হলে রাজনৈতিক ও কৌশলগত সচেতনতা বাড়াতে হবে।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম, গণ অধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হোসেন, লে. কর্নেল (অব.) আখতার হোসেন, লে. কর্নেল (অব.) আয়ুব হোসেন, মেজর ইমরান হাসান, লে. কর্নেল (অব.) নূরউদ্দিন, ড. নূরুল বশীর, আলহাজ মোহাম্মদ ফজরুল হক, ড. খন্দকার আলমগীর এবং লে. কর্নেল আজিজ।