নিজস্ব প্রতিবেদক
মার্চ ১, ২০২৫, ১২:৫৪ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
মার্চ ১, ২০২৫, ১২:৫৪ এএম
ভারত ও পাকিস্তানপন্থী রাজনীতির ঠাঁই বাংলাদেশে হবে না—নাহিদ ইসলাম
সংবিধান সংস্কারের জন্য গণপরিষদ নির্বাচনর দিতে হবে—আখতার হোসেন
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি আত্মপ্রকাশ করেছে। আর এ নতুন দলের আহ্বায়ক করা হয়েছে সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে। আর সদস্য সচিব করা হয়েছে আখতার হোসেনকে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে নতুন রাজনৈতিক দল ও আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিবের নাম ঘোষণা করেন জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নিহত শহীদ মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন রাব্বীর বোন মীম আক্তার।
মীম আক্তার বলেন, ইতিহাসে দেখিনি বোনের কাঁধে ভাইয়ের লাশ। আমরা দুই বোনের কাঁধে ছিল ভাইয়ের লাশ। পরে সদস্য সচিব আখতার হোসেন আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন।
এতে দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন শামান্তা শারমিন, আরিফুল ইসলাম আদীব, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব হয়েছেন ডা. তাসনিম জারা, নাহিদা সরওয়ার রিভা, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হয়েছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হয়েছেন সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক হয়েছেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক হয়েছেন আবদুল হান্নান মাসউদ।
যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে নুসরাত তাবাসসুম, মনিরা শারামিন, মাহবুব আলম, সারওয়ার তুষার, অ্যাডভোকেট মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন, তুজরুবা জাবিন, সুলতান মুহাম্মদ জাকারিয়া, ড. আতিক মুজাহিদ, আশরাফ উদ্দিন মাহদি, অর্পিতা শ্যামা দেব, তানজিল মাহমুদ, অনিক রায়, খালেদ সাইফুল্লাহ, জাবেদ রাসিম, এহতেশাম হক এবং হাসান আলী।
যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন, আরিফ সোহেল, রশিদুল ইসলাম রিফাত, মাহিন সরকার, মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন, আকরাম হোসাইন, এস এম সাইফ মুস্তাফিজ, সালেহ উদ্দিন সিফাত (দপ্তরে সংযুক্ত), আলাউদ্দিন মুহাম্মদ, ফরিদ উদ্দীন, মোহাম্মদ ফারহাদ আলম ভুইয়া, মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া, লুৎফর রহমান, মোহাম্মদ মইনুল ইসলাম তুহিন, মুশফিকুর সালেহিন, ড. জাহিদুল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম মুসা, হুমায়রা নুর, মুশফিকুর রহমান জুহান, মোল্লা মোহাম্মদ ফারুক এহসান, শাগুপ্তা বুশরা বিসমা, আহনাফ সাঈদ খান, আবু সাঈদ মোহাম্মদ সুজাউদ্দিন, মীর আরশাদুল হক, ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, তারেক রেজা, মশিউর রহমান, জয়নাল আবেদিন শিশির, মোহাম্মদ মুনতাসির রহমান, গাজী সালাউদ্দিন তানভীর, তামিম আহমেদ এবং তাহসিন রিয়াজ।
বিকাল ৪টার পর নতুন দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান শুরু হয়। বিকাল সোয়া ৪টার দিকে জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া তরুণদের রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান শুরু হয়।
শুরুতে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা হয়। এরপর পবিত্র গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল থেকে পাঠ করা হয়। ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের পর জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরপর জুলাই আগস্টে নিহতদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং নিজ নিজ ধর্মমতে তাদের জন্য দোয়া করা হয়। এর আগে স্লোগানে স্লোগানে মিছিল নিয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে জড়ো হন বিপুলসংখ্যক ছাত্র-জনতা। জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ ঘিরে পতাকা হাতে মিছিল নিয়ে উচ্ছ্বাস করেন তারা। দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, মহানগর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে হাজির হন ছাত্র-জনতা। কানায় কানায় পূর্ণ মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশের অনুষ্ঠানে সার্বিক নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সরেজমিন দেখা গেছে, আজকের (শুক্রবার) আয়োজনকে কেন্দ্র করে মেডিকেল টিম, অস্থায়ী ওয়াশ রুম, পুলিশ বুথ, নারীদের জন্য বুথ, ভিআইপি বুথ ও পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সংবাদকর্মীদের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গেছে।
অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির আহমেদ আলী কাসেমী, বিকল্পধারার নেতা মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমেদ, লেবার পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামী ঐক্য জোটের সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন, বিএলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে কূটনৈতিকদের মধ্যে পাকিস্তানের হাইকমিশনারের পক্ষে একজন কাউন্সিল অংশ নিয়েছেন বলে মঞ্চ থেকে জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে জুলাই শহীদদের স্মরণে নীরবতা : পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক তারেক রেজা। গীতা থেকে পাঠ করেন অর্পিতা শামা দেব, ত্রিপিটক থেকে পাঠ করেন আবির বড়ুয়া, বাইবেল থেকে পাঠ করেন অলীক বাণী।
এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। পরে মহান মুক্তিযুদ্ধ, জুলাই আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরই মধ্যে নতুন দলের শীর্ষ কয়েকটি পদে নাম চূড়ান্ত হয়েছে। তারুণ্যনির্ভর নতুন এই দলের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সকাল থেকেই নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ যোগ দিয়েছেন।
‘বাংলাদেশে ভারত ও পাকিস্তানপন্থী রাজনীতির ঠাঁই হবে হবে না’ বলে জানিয়েছেন নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে সামনে রেখে, বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থকে সামনে রেখে রাষ্ট্রকে বির্নিমাণ করব।’
এ সময় নাহিদ ইসলাম শুরুতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতা, শহীদ পরিবারের সদস্য ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের সংগ্রামী সালাম ও শুভেচ্ছা জানান।
সাবেক এই তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা সামনের কথা বলতে চাই। পেছনের ইতিহাস অতিক্রম করে সম্ভাবনার বাংলাদেশের কথা বলতে চাই।’
নাহিদ ইসলাম জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ‘তুমি কে, আমি কে, বিকল্প, বিকল্প’ স্লোগানটি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিকল্পের জায়গা থেকে এই নতুন দলের আত্মপ্রকাশ। আজকের মঞ্চ থেকে শপথ, বাংলাদেশকে বিভাজিত করা যাবে না।’
অনুষ্ঠানে নাহিদ ইসলাম তার ঘোষণাপত্রে বলেন, জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে আমরা দেশের ছাত্র-জনতা এ মর্মে ঘোষণা করছি। আমরা হাজার বছরের ঐতিহাসিক পরিক্রমায় বঙ্গীয় বদ্বীপের জনগোষ্ঠী হিসেবে এক সমৃদ্ধ ও স্বকীয় সংস্কৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। প্রায় ২০০ বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের পত্তন ঘটে। তবে শোষণ ও বৈষম্য থেকে এ দেশের গণমানুষের মুক্তি মেলেনি। ফলে দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
কিন্তু স্বাধীনতার পর দীর্ঘসময় ধরে বাংলাদেশের জনগণকে বারবার গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে হয়েছে। ১৯৯০ সালে ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে সামরিক স্বৈরাচারকে হটিয়েছে। তথাপি, স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরিয়েও আমরা গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত কর্তে এমন একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করতে পারিনি। বরং বিগত ১৫ বছর দেশে একটি নিষ্ঠুর ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম হয়েছিল, যেখানে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থে বেপরোয়া ব্যবহার করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে। বিরোধী মতের কণ্ঠরোধ, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা্ল, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও অর্থপাচারকে একটি রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতিতে পরিণত করা হয়েছে।
জুলাইয়ে ছাত্র-জনতা বিপুল আত্মত্যাগের মাধ্যমে এক অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ দেড় দশক ধরে জেঁকে বসা ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটিয়েছে। কিন্তু আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই নতুন স্বাধীনতা কেবল একটি সরকার পতন করে আরেকটি সরকার বসানোর জন্যই ঘটেনি। জনগণ বরং রাষ্ট্রের আষ্টেপৃষ্ঠে জেঁকে বসা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপের মাধ্যমে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আকাঙ্ক্ষা থেকে এই অভ্যুত্থানে সাড়া দিয়েছিল, যেন জনগণের অধিকারভিত্তিক একটি রাষ্ট্র পুনর্গঠিত হয়। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিচ্ছি। এটি হবে একটি গণতান্ত্রিক, সমতাভিত্তিক ও জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল।
আমরা মনে করি জুলাই ২০২৪ গণঅভ্যুত্থান আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার লড়াই সূচনা করেছে। একটি গণতান্ত্রিক নতুন সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে আমাদের সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সব সম্ভাবনার অবসান ঘটাতে হবে। আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন আমাদের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষ্য। আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিকে জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষায় শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। ভেঙে পড়া রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় গড়ে তোলা ও তাদের গণতান্ত্রিক চরিত্র রক্ষা করা হবে আমাদের রাজনীতির অগ্রাধিকার। এর মধ্য দিয়েই কেবল আমরা একটি পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হতে পারব।
আমরা এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ চাই যেখানে সমাজে ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে বিভেদের বদলে ঐক্য, প্রতিশোধের বদলে ন্যায়বিচার এবং পরিবারতন্ত্রের বদলে মেধা ও যোগ্যতার মানদণ্ড প্রতিষ্ঠিত হবে। আমাদের রাজনীতিতে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কোনো স্থান হবে না।
আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিকে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বরকে মূলধারায় তুলে আনা হবে। আমাদের রিপাবলিকে সাধারণ মানুষ, একমাত্র সাধারণ মানুষই হবে ক্ষমতার সর্বময় উৎস। তাদের সব ধরনের গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকারের শক্তিশালী সুরক্ষাই হবে আমাদের রাজনীতির মূলমন্ত্র। আমরা রাষ্ট্রে বিদ্যমান জাতিগত, সামাজিক, ধর্মীয় আর সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও বৈচিত্র্য রক্ষার মাধ্যমে একটি বহুত্বপূর্ণ ও সমৃদ্ধ সমাজ বিনির্মাণ করতে চাই। আমাদের রিপাবলিক সব নাগরিককে দারিদ্র্য, বৈষম্য ও ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে শক্তিশালী সুরক্ষা প্রদান করবে। আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিকে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর কোনো অংশকেই অপরায়ন করা হবে না। বরং রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিককে সমান গুরুত্ব প্রদান ও সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
অর্থনীতিতে, আমরা কৃষি-সেবা-উৎপাদন খাতের যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে এমন একটি জাতীয় অর্থনীতি গড়ে তুলতে চাই যেটি হবে স্বনির্ভর, আয়-বৈষম্যহীন ও প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীল। আমাদের অর্থনীতিতে সম্পদ একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর হাতে পুঞ্জীভূত হবে না, বরং সম্পদের সুষম পুনর্বণ্টন হবে আমাদের অর্থনীতির মূলমন্ত্র। আমরা বেসরকারি খাতের সিন্ডিকেট ও গোষ্ঠীস্বার্থ নিয়ন্ত্রণে দৃঢ? পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ভোক্তা ও জনস্বার্থ সংরক্ষণ করব। অর্থনৈতিক অগ্রগতির মাধ্যমে এই অঞ্চলের একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে আমরা আঞ্চলিক সহযোগিতা ও আন্তর্জাতিক অংশীদারত্ব নিশ্চিত করব এবং বিজ্ঞান-প্রযুক্তি খাতে জোর দিয়ে উদ্ভাবনী সংস্কৃতি গড়ে তোলার মাধ্যমে একটি টেকসই, আধুনিক অর্থনীতি গড়ে তুলব।
পরিশেষে, আমরা একটি ন্যায্যতা ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় আমাদের সংকল্প আবারও পুনর্ব্যক্ত করতে চাই। আমরা দৃঢ?ভাবে বিশ্বাস করি, জুলাই ২০২৪ গণঅভ্যুত্থান কেবল একটি ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধেই বিজয় নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণেরও শপথ। চলুন আমরা একসঙ্গে, হাতে হাত রেখে, এমন এক বাংলাদেশ গড়ে তুলি যেখানে প্রতিটি নাগরিকের কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হবে, যেখানে ন্যায় প্রতিষ্ঠা, মানুষের অধিকারের সংগ্রামই হবে রাজনীতির অন্যতম লক্ষ্য। যেখানে সাম্য ও মানবিক মর্যাদা হবে রাষ্ট্রের ভিত্তি।
এখনই সময়-নতুন স্বপ্ন দেখার, নতুন পথচলার, এবং একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার!
এই নতুন বাংলাদেশ গড়ায় আমরা সবাই প্রত্যেকে যার- যার অবস্থান থেকে শপথ করি। ঐক্যবদ্ধ হই। এবং আমাদের কাঙ্ক্ষিত সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে দৃঢচিত্তে এগিয়ে যাই। আমাদের দেশ, আমাদের অধিকার, আমাদের ভবিষ্যৎ- আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক অধরা কোনো স্বপ্ন নয়, এটি আমাদের প্রতিজ্ঞা।
এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের পরপরই সংবিধান সংস্কারের জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
তিনি বলেন, আপনারা দোয়া করবেন বাংলাদেশের তরুণ সমাজ আজকে (শুক্রবার) যে দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে মহান রাব্বুল আলামিন যেন আমাদের সেই দায়িত্ব পালনের তৌফিক দেন।
তিনি আরও বলেন, তরুণরা স্বপ্ন দেখে আগামী বাংলাদেশ নতুন এক সংবিধানের মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে। সেই স্বপ্ন নিয়ে গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি।
শীর্ষ নেতাদের রাজনৈতিক উত্থান যেভাবে
নতুন দলটির শীর্ষ ১০ নেতাদের অধিকাংশের রাজনৈতিক আন্দোলনের শুরু হয় ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে। পরবর্তীতে ছাত্র অধিকার পরিষদের ব্যানারে ২০১৯ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন থেকে।
নাহিদ ইসলাম : নাহিদ ইসলামের জন্ম ১৯৯৮ সালে ঢাকার অদূরে ফকিরখালীতে। তিনি ২০১৪ সালে ঢাকার দক্ষিণ বনশ্রী মডেল হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে ২০১৬ সালে এইচএসি পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। ২০২২ সালে স্নাতক সম্পন্ন করে একই বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হন তিনি।
চব্বিশের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের ১ দফার ঘোষক নাহিদ ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনীতি শুরু করেন। পরে ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনে নুরুল-রাশেদ-ফারুক প্যানেল থেকে নাহিদ নির্বাচনে অংশ নেন। তিনি সংস্কৃতি সম্পাদক পদে নির্বাচন করেন। তবে তিনি জয়ী হননি। পরে মতবিরোধের কারণে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ থেকে বেরিয়ে আসেন নাহিদ।
পরে ২০২৩ সালের অক্টোবরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নির্দলীয় ছাত্র সংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি আত্মপ্রকাশ করে। এর কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব হন নাহিদ।
২০২৪ সালের ৫ জুন সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র হাইকোর্টে খারিজ হলে আন্দোলনের উদ্যোগ নেন নাহিদ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সংঘটিত এই আন্দোলনের ১ নম্বর সমন্বয়ক ছিলেন তিনি।
কোটাবিরোধী আন্দোলন ঘিরে দুইবার আটক হন নাহিদ। প্রথমবার ১৯ জুলাই সাদা পোশাকধারী কয়েকজন লোক তার এক বন্ধুর বাড়ি থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায়। চোখে কাপড় বেঁধে, হাতকড়া পরিয়ে তাকে মারধর করা হয়। দুই দিন পর পূর্বাচলে একটি ব্রিজের তলায় তাকে ফেলে দেয়া হয়। সেখান থেকে কোনোরকমে একটি রিকশায় উঠে বাড়িতে ফেরেন তিনি।
দ্বিতীয়বার ২৬ জুলাই ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে নাহিদকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন জানান, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ নাহিদকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে। এরপর ২ আগস্ট ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হাসিনার পতনের ১ দফা ঘোষণা করেন নাহিদ ইসলাম। তীব্র গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনার সরকারের পতন হয়।
এরপর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন নাহিদ ইসলাম। পান তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি নতুন দলের দায়িত্ব নেয়ার জন্য পদত্যাগ করেন তিনি।
আখতার হোসেন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০১৫-১৬ সেশনে ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ১৪তম হয়েছিলেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আখতার হোসেন। সে বছর ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠলে তার প্রতিবাদে অনশন শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে কোটা আন্দোলনে অংশ নেন এবং ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে ছাত্র অধিকার পরিষদের নুর-রাশেদ প্যানেল থেকে সমাজসেবা পদে নির্বাচন করে জয় পান তিনি।
পরবর্তীতে ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে বেরিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবরে নতুন ছাত্র সংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি গঠন করেন আখতার। সংগঠনের আহ্বায়ক ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে সংগঠনটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি আত্মপ্রকাশের দিনেও ছাত্রলীগের হাতে মারধরের শিকার হয়ে গুরুতর আহত হয়েছিলেন এই ছাত্রনেতা। চব্বিশের কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ১৭ জুলাই ঢাবির টিএসসি এলাকায় কফিন মিছিল কর্মসূচির আগে আখতারকে আটক করে পুলিশ। ৫ আগস্ট হাসিনার পতনের পর রাতে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। এরপর ২০২৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠিত হলে সেখানে সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পান আখতার।
নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী : জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবিতে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। চব্বিশের ৩ আগস্ট নাহিদ ইসলামের স্বৈরাচারী হাসিনার পতনের ১ দফা ঘোষণার সময় তার পাশে ছিলেন তিনি। আন্দোলনকে পেছন থেকে সংঘটিত করতে তার ভূমিকা রয়েছে। পরে জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠিত হলে সেখানে আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি।
হাসনাত আবদুল্লাহ : কুমিল্লার ছেলে হাসনাত জেলার দেবীদ্বার সরকারি রেয়াজ উদ্দিন পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০১৪ সালে এসএসসি পাস করেন। পরে পারুয়ারা আবদুল মতিন খসরু কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন তিনি।
২০২২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে প্রশাসনিক দুর্নীতি, কর্মকর্তাদের দৌরাত্ম্য ও দীর্ঘসূত্রিতা বন্ধের দাবিতে অনশন করে আলোচনায় এসেছিলেন তিনি। বিভিন্ন ভর্তি কোচিং সেন্টারে ইংরেজি বিষয়ক ক্লাস নিতেন তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত পরবর্তীতে সংগঠনটির আহ্বায়ক মনোনীত হন। ২০২৪ সালে আন্দোলনের শুরু থেকেই সরব ছিলেন হাসনাত। কোটা আন্দোলনের সময় ২৬ জুলাই অন্যান্য সমন্বয়কদের সঙ্গে হাসনাতকেও ডিবি কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়।
সারজিস আলম : পঞ্চগড়ের ছেলে সারজিস জেলার আলোয়াখোয়া তফশিলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করেন। পরে ঢাকার বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন তিনি। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হন। পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার সীমান্তবর্তী বামনকুমার গ্রামে তার বাড়ি।
অমর একুশে হল থেকে ২০২৩ সালে টেবিল টেনিসেও পেয়েছেন পুরস্কার। বিতার্কিক হিসেবেও সারজিস আলম বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন। ২০২২ সালে জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতা, রোকেয়া বিতর্ক অঙ্গন, বিজয় ৭১ ডিবেটিং ক্লাব, সমাজ কল্যাণ ডিবেটিং ক্লাব, কবি জসীমউদ্দীন হল ডিবেটিং ক্লাব প্রভৃতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিসকেও অন্যান্য সমন্বয়কদের সঙ্গে ২৬ জুলাই ডিবি কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়।
সারজিস ২০২৪ সালের ২১ অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ এর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ের মধ্যে ৯ ডিসেম্বর জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
আরিফুল ইসলাম আদীব : বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের ছেলে আদীবের ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে আদীবের সাংগঠনিক পথচলা শুরু। ২০১৯ সালে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন তিনি।
পরবর্তীতে রাজনৈতিক দল গণঅধিকার পরিষদের ঘোষণাপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও প্রতিষ্ঠাকালীন সংগঠক ছিলেন। ২০২৩ সালে ১৬ ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ের গঠিত ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ক ছিলেন। এ ছাড়া ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
তিনি কয়েকবার আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ২০১৯ সালে ডাকসু ভবনে তার ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং পরবর্তীতে জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠনের সংগঠক হিসেবেও বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
পেশাগত জীবনে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ফ্রিল্যান্স লেখক হিসেবে কাজ করেছেন আদীব। ২০২০ সালের পর থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট ও মাল্টিমিডিয়া জার্নালিস্ট হিসেবে কাজ করছেন তিনি। বর্তমানে তিনি জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও রয়েছেন তিনি।
আদীবের বাবা একজন মাদ্রাসা শিক্ষক ও মা গৃহিণী। ২০১১ সালে বাঘিয়া আল আমিন কামিল মাদ্রাসা থেকে মাধ্যমিক সম্পন্নের পর ভর্তি হন ঝালকাঠি এনএস কামিল মাদ্রাসায়। সেখান থেকে ২০১৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনে ভর্তি হন আদীব।
আবদুল হান্নান মাসউদ : নোয়াখালী জেলার হাতিয়ার ছেলে মাসউদ আলোচনায় আসেন ২৬ জুলাই যখন ছয় সমন্বয়ক ডিবি কার্যালয়ে আটক ছিলেন। সেসময় ভিডিও বক্তব্যে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করতেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম এই সমন্বয়ক।
২০২৩ সালে আখতার হোসেন ও নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ হওয়া গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির মাধ্যমে মাসউদের রাজনীতি শুরু। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরে ২০২৪ সালের ২২ অক্টোবর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চার সদস্যের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটিতে মুখ্য সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। মাসউদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের অধীনে ইংরেজি ভাষা শিক্ষা বিভাগে পড়ছেন তিনি।