Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ০৩ মার্চ, ২০২৫,

নিয়ন্ত্রণহীন রাজধানীর কাঁচাবাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্চ ২, ২০২৫, ১২:০৫ এএম


নিয়ন্ত্রণহীন রাজধানীর কাঁচাবাজার
  • সাহরি ও ইফতারের পণ্যের দাম চড়া

  • সক্রিয় এক শ্রেণির সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী চক্র

পবিত্র রমজানের শুরুতেই রাজধানীর বাজারগুলোতে কেনাকাটার ধুম পড়ে গেছে। বিশেষ করে ইফতার ও সেহরি তৈরির পণ্য কিনতে ক্রেতারা ভিড় করছেন। পাশাপাশি কাঁচাবাজারে অন্য সময়ের তুলনায় মাছ, মাংস, সবজির চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। তবে বিপত্তি বাড়ছে চড়া মূল্যে। 

ক্রেতাদের অভিযোগ— প্রতিবছর রমজান এলেই নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করে দেয় এক শ্রেণির সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী চক্র।  

গতকাল সন্ধ্যায় চাঁদ দেখার মাধ্যমে রমজানের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে রাজধানীর বাজারগুলোতে ইফতার ও সেহরির খাবার তৈরির সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। সব ধরনের সবজি, মাছ, মুরগি, ফলফলাদির দাম বেড়েছে। তবে আলু ও পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। 

গত শুক্রবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, ফকিরাপুল বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। ক্রেতারা বলছেন, রমজানে বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কিছু বলার নেই, দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিমাণে কম কিনতে হবে। তাদের অভিযোগ, আগের সরকারও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান সরকারও পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। আসলে সাধারণ মানুষ ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে সরেজমিন মূল্য বৃদ্ধির তথ্য পাওয়া গেছে।

রাজধানীর এসব বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও রমজান মাসকে কেন্দ্র করে শীত ও গ্রীষ্মকালীন সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। এসব বাজারে সিম কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বড় আকারের ফুলকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা পিস, বাঁধাকপি বড় সাইজের ৩০ থেকে ৪০ টাকা পিস, প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পাকা টমেটো কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, গাজর ৩০ থেকে ৪০ টাকা, মুলা ২০ টাকা, মটরশুঁটি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, খিরা ৭০ টাকা ও শসা ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি বেগুন কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধুন্দল ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, কচুরমুখী ১০০ টাকা, কচুর লতি ১২০ টাকা, ঝিঙা ও কাঁচামরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে লেবুর হালি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ধনেপাতা ১৪০ টাকা কেজি, কাঁচা কলা হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, চাল কুমড়া ৮০ টাকা পিস, ক্যাপসিকাম ১৫০ টাকা ও মিষ্টি কুমড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লালশাক ১০ টাকা আঁটি, লাউশাক ৪০ টাকা, মুলাশাক ১০ টাকা, পালংশাক ১০ টাকা, কলমিশাক তিন আঁটি ২০ টাকা, পুঁইশাক ৫০ টাকা ও ডাটাশাক ২০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে বাজারে আলু ও পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। নতুন আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বগুড়ার লাল আলু ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজ ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে আদা প্রতিকেজি ১৪০ থেকে ২৮০ টাকা, রসুন দেশি ১২০ টাকা, ইন্ডিয়ান ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা, খেসারির ডাল ১৩০ টাকা, মিনিকেট চাল ৮২ থেকে ৯০ টাকা ও নাজিরশাইল চাল ৮০ থেকে ৮৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে সোনালি কক মুরগি ৩৩০ টাকায় ও সোনালি হাইব্রিড ৩১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ২১০ টাকা ও দেশি মুরগি ৫৬০ টাকা করে কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে চলতি সপ্তাহে মাছের বাজার চড়া রয়েছে। এসব বাজারে ৫০০ গ্রামের ইলিশ এক হাজার ১০০ টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের এক হাজার ৭০০ টাকা, এক কেজি ওজনের দুই হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে এক কেজি শিং মাছ চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, প্রতিকেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, দেশি মাগুর ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা, মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষের পাঙাস ২০০ থেকে ২৩০ টাকা, চিংড়ি ৭৫০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বড় কাতল ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, পোয়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা এক হাজার ৩০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৫০০ টাকা, পাঁচ মিশালি ২২০ টাকা, রূপচাঁদা এক হাজার ২০০ টাকা, বড় বাইম এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা, দেশি কই এক হাজার ২০০ টাকা, শোল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে ৮০০ টাকা, কোরাল ৭০০ টাকা, কাজলি ৮০০ টাকা ও কাইকলা মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে গরুর গোশত প্রতিকেজি ৬৫০ থেকে ৭৮০ টাকা, গরুর কলিজা ৭৮০ টাকা, গরুর মাথার গোশত ৫০০ টাকা, গরুর বট ৪০০ টাকা ও খাসির গোশত প্রতিকেজি এক হাজার ১৫০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা, হাঁসের ডিম ২২০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

শনির আখড়া বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আপেল বর্তমানে ৩০০-৪০০ টাকা কেজি, মাল্টা ২৮০ টাকা, পেয়ারা ৮০-১০০ টাকা, তরমুজ সাইজ ভেদে ৪৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতা হাসানুল হক জানান, সব ধরনের ফলের দাম কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা করে বেড়েছে।

তিনি বলেন, প্রতিটি ফলের দাম বাড়তির দিকে। আপেল ও মালটার দাম আরও বাড়বে। একশ্রেণির আড়তদার মাল স্টক করে ফেলছে, ফলে পর্যাপ্ত পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। দাম বেশি দিয়ে কিনে সীমিত লাভ করে আমরা ছেড়ে দিচ্ছি। 

তিনি বলেন, পেয়ারা আগে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতো। এখন ১২০ টাকা প্রতি কেজি। পেঁপে প্রায় ২০০ টাকা কেজি। আর তরমুজ ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মিনহাজ নামের এক ক্রেতা জানান, পরিচিত একজন বিক্রেতার কাছ থেকে এক লিটারের একটি সয়াবিন তেল কিনেছেন তিনি। গায়ে মূল্য ১৭৫ টাকা লেখা থাকলেও তিনি কিনেছেন ১৯০ টাকায়। 

মুসলিম বাজারে বেশ কয়েকটি মুদি দোকানে গিয়ে সয়াবিন তেল চোখে পড়েনি। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, সরবরাহ কম থাকায় তারা সয়াবিন তেল ক্রেতাদের দিতে পারছেন না। ডিলাররা আশ্বস্ত করেছেন কিছুদিনের মধ্যেই পরিস্থিতি ঠিক হবে।

Link copied!