নিজস্ব প্রতিবেদক
মার্চ ৩, ২০২৫, ১২:১৮ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
মার্চ ৩, ২০২৫, ১২:১৮ এএম
জমজমাট বেইলি রোডের ইফতার বাজার
রাজধানীবাসীর প্রথম পছন্দ ঐতিহ্যবাহী চকবাজারের ইফতারি। কারণ, এখানে পাওয়া যায় হরেক রকমের ইফতার পণ্য; যা অন্য কোথাও মেলে না। ঐতিহ্যবাহী এই বাজারে বড় বাপের পোলা, সুতি কাবাব, মুখরোচক বিরিয়ানি আর শাহী হালিম ও জিলাপির জন্য বিখ্যাত। এখানে ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসা বিক্রেতারা এবারও মুখরোচক সব খাবার বিক্রি করছেন। রমজানের প্রথম দিনেই জমজমাট ঐতিহাসিক এই ইফতার বাজার।
গতকাল রোববার বিকেল ৪টার দিকে চকের ইফতার বাজারে গিয়ে দেখা যায়, নানা রকম ইফতার সাজানো রয়েছে। কেউ ব্যস্ত হাঁকডাক দিয়ে বিক্রিতে, আবার কেউ ব্যস্ত প্যাকেট করতে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে ক্রেতা আসছেন। আর তারা পছন্দের খাবার কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। কবুতরের রোস্ট বিক্রি করছেন মোস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, মুরগির রোস্ট ৩০০ টাকা, কোয়েল পাখির রোস্ট ১০০ টাকায় প্রতি পিচ বিক্রি করছি। প্রথম দিনের ক্রেতাদের ভিড় ভালোই। যেমন ক্রেতা আছে, তেমনি অনেকে ভিডিও করতে এসেছে।
এদিকে চকবাজারে ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙায় ভইরা লইয়া যায়’ নামক বিভিন্ন পদের খাবারের মিশ্রণে মুড়িভর্তার বিশেষ এক খাবার নিয়ে চারদিকে ব্যাপক শোরগোল দেখা গেছে। সেখানে প্রতি কেজি এই মিশ্রিত খাবারের দাম ৮শ থেকে এক হাজার টাকা। কেউ আধা কেজি, কেউ ২৫০ গ্রাম করে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
চকবাজারের শাহী জিলাপি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি ধরে। বিক্রেতা মনসুর আলী বলেন, গত বছরে দুই কেজি ওজনের জিলাপি বিক্রি করেছি। এবারও করব। আজকে প্রথম তাই এতো বড় করা হয়নি। তবে এখন যা আছে তা ৬০০ গ্রামের ওপরে হবে। দেখা যায়, চকবাজারের আরেক বিখ্যাত খাবার সুতি কাবাব। গরুর সুতি কাবাব কেজি ১২০০ টাকা এবং খাসির সুতি কাবাব ১৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি শাহি ছোলা ৩০০ টাকা, ঘুঘনি ২০০ টাকা, চিকেন আচারী ১২০০ টাকা, কাশ্মীরি বিফ আচারী ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিকেন রোল ৫০ টাকা, হালিম ১০০ থেকে ৮০০ টাকা প্রতি বক্স বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া, চিকেন টিক্কা, চিকেন গ্রেভি, চিকেন ড্রামস্টিক, চিকেন কাটলেট, কিমা পরোটা, পনির পরোটা, দই বড়া, রস বুন্দিয়া, মুরগি মোসল্লাম, বিফ শিক কাবাব, বোরহানি, ডিম চপ, ভেজিটেবল রোল সবই পাওয়া যাচ্ছে। তা ৫০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। বোতলবেধে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ২০০ টাকা।
ইফতারি কিনতে আসা পুরোনো ঢাকার বাসিন্দা ইদ্রিস মিয়া বলেন, প্রথম রোজা তাই পরিবারের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ইফতার করব। এখানে চলে আসলাম। দেখি কী নেয়া যায়, তবে এখান থেকে হালিম, জিলাপি, ঘুঘনি, কয়েক ধরনের কাবাব নিয়ে যাব।
এখানে ইফতার সামগ্রীর দাম কেমন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় প্রতিটি জিনিসের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি। তবে ছোট-ছোট জিনিসগুলোর দাম তেমন বাড়েনি। জিগাতলা থেকে আসা রুহুল আমিন নামে এক ক্রেতা বলেন, আমি এখান থেকে সুতি কাবাব নেয়ার জন্য এসেছি। কয়েকটা দোকান দেখেছি, তারা ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি করছে, হাফ কেজি নিয়ে যাব।
তিনি আরও বলেন, মূলত ইফতারে চকবাজারের কোনো আইটেম না থাকলে অপূর্ণ লাগে। তাই এখানে ইফতার কেনার জন্য চলে আসলাম।
জমজমাট বেইলি রোডের ইফতার বাজার
প্রথম রমজানেই জমে উঠেছে রাজধানীর বেইলি রোডের ইফতার বাজার। রমজানের শুরুতেই পছন্দের ইফতার কিনতে বেইলি রোডের নবাবী ভোজ ও বেইলি পিঠা ঘরে ক্রেতাদের বেশ ভিড় দেখা গেছে। নবাবী ভোজের বিভিন্ন আইটেমের হালিম কিনতে লাইন দিচ্ছেন ক্রেতারা। অপরদিকে বেইলি পিঠা ঘরের গুড়ের জিলাপিসহ বেশকিছু আইটেম বিক্রির শীর্ষে রয়েছে। গতকাল রাজধানীর বেইলি রোডের ইফতার বাজার ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, নবাবী শাহী হালিম ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা, ঘি ও জাফরানে ভাজা নবাবী স্পেশাল শাহী জিলাপি ৪৫০ টাকা কেজি, ঘি ও জাফরানে ভাজা নবাবী স্পেশাল বোম্বে জিলাপি ৩৫০ টাকা কেজি, ঘি ও জাফরানে ভাজা নবাবী স্পেশাল রেশমি জিলাপি ৬০০ টাকা কেজি, নবাবী জর্দা ২৫০ টাকা কেজি, নবাবী ক্ষিরসা ফালুদা ৩৫০ টাকা কেজি, নবাবী জাফরানি পেস্তা বাদাম শরবত ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি, নবাবী বোরহানি ১২০ থেকে ২৩০ টাকা বোতল, নবাবী লাবাং ১২০ টাকা লিটার, সুইট লাচ্ছি ২৫০ টাকা লিটার, চিকেন ঝাল ফ্রাই ১৪০০ টাকা কেজি, বিফ ভুনা ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি, মাটন ভুনা ১ হাজার ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া শাহী ছোলা ৩৫০ টাকা কেজি, পেঁয়াজু ১৫ টাকা পিস, বেগুনি ১৫ টাকা পিস, চিকেন সমুচা ৩০ টাকা পিস, ফুলকপির চপ ৩০ টাকা পিস, অনথন ৩০ টাকা পিস, মধুবান ৫০ টাকা পিস, মুরালি ৩০০ টাকা কেজি, ডিম চপ ৩০ টাকা পিস, স্প্রিং রোল ৩০ টাকা পিস, স্পেশাল বাটার নান ৭০ টাকা পিস, রুমালি রুটি ৪০ টাকা পিস, চিকেন রেশমি কাবাব ২৮০ টাকা পিস, শিক কাবাব ২২০ টাকা পিস, চিকেক সাসলিক ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
শাহাবুদ্দিন নামের এক ক্রেতা বলেন, ইফতারে আমার পরিবার সবসময় একাধিক আইটেম পছন্দ করে। বাসায় ছোলা-বুট ও চপ তৈরি করা হয়। কিন্তু জিলাপি, বুরিন্দি, নান, লেগ রোস্ট এগুলো ইফতার বাজার থেকেই বেশিরভাগ সময় কেনা হয়। প্রথম রমজান বলেই ইফতারে আইটেম একটু বেশি থাকবে।
আব্দুল কাদের নামের আরেক ক্রেতা বলেন, বেশকিছু আইটেমের দাম বেশি। দাম একটু কম হলে একাধিক আইটেম কেনা যায়। আমরা যারা হোস্টেলে থাকি তাদের বাসায় কিছুই রান্না হয় না। মায়ের হাতের ইফতার তো কপালেই জোটে না। এদিকে অতিরিক্ত দাম হওয়ায় ইচ্ছা থাকলেও সব আইটেম ট্রাই করা যায় না। দাম নাগালের মধ্যে হলে ভালো হয়।
আশ্রাফ আলী নামের এক বিক্রেতা বলেন, প্রথম রমজানে আলহামদুলিল্লাহ ভালো বিক্রি হচ্ছে। মানুষ আগ্রহ নিয়ে বিভিন্ন আইটেমের ইফতার সামগ্রী নিচ্ছেন। বেইলি পিঠা ঘিরের বিক্রেতা মো. বাশার বলেন, বিক্রি আলহামদুলিল্লাহ ভাল। সবকিছু মন্দা। তারপরেও যা হচ্ছে তাতেই আলহামদুলিল্লাহ।