Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ, ২০২৫,

সিন্ডিকেট ভাঙছে না সয়াবিনের

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্চ ৪, ২০২৫, ১২:০৭ এএম


সিন্ডিকেট ভাঙছে না সয়াবিনের
  • অতিরিক্ত দামে সয়াবিন তেল বিক্রি করায় জরিমানা

  • চাহিদার সুযোগে বিক্রি হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ তেল

  • নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর অভিযানে লুকোচুরি ব্যবসায়ীদের

  • সরবরাহ ঘাটতির অভিযোগ ব্যবসায়ীদের

দুই দিনের মধ্যে সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে—বাণিজ্য উপদেষ্টা 

প্রতিবছর রমজান এলেই হাতের নাগালের বাইরে চলে যায় সব খাদ্যপণ্যের দাম। বিশেষ করে বুট, ছোলা, ডাল, চিনি, মরিচ ও মাছ-মাংসের দাম হয়ে যায় দ্বিগুণ। ফলে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজিতে বছরের এই সময়টায় একটু ভালো কিছু খাওয়ার চেষ্টা কষ্টকর হয়ে যায়। তবে এ বছর রমজানে নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে হলেও বাধ সেধেছে ভোজ্যতেল সয়াবিন। বলতে গেলে বাজার থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেল একপ্রকার উধাও।

ভোক্তারা বলছেন, দাম বাড়াতেই কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী ভোজ্যতেলের সরবরাহ অনেক কম। ফলে সংকট তৈরি হয়েছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে হাহাকার ভোজ্যতেলের জন্য। দোকানে দোকানে ঘুরেও মিলছে না এক লিটার, দুই লিটার সয়াবিন তেল। পাঁচ লিটার কয়েকটি দোকানে পাওয়া গেলেও তা আদৌ সয়াবিন নয়। মিলছে পামওয়েল কিংবা সানফ্লাওয়ার ওয়েল।

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মুদি দোকানগুলো ঘুরে এমন চিত্র মিলে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কিছু দোকানে দৃশ্যমান স্থানে ভোজ্যতেল প্রদর্শন করা হচ্ছে না। তেল নেই বলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ক্রেতাকে। কিন্তু তল্লাশিতে দোকানের গোপনীয় স্থানে বিপুল পরিমাণে ভোজ্যতেলের পাঁচ লিটারের বোতল মজুদ পাওয়া গেছে। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী ভোক্তার চাহিদা বেশি থাকায় মেয়াদোতীর্ণ তেলও বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ভোক্তা অধিদপ্তর বলছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে উৎপাদিত ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল যার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বা এমআরপি ৮১৮ টাকা। কিন্তু তদারকিতে দেখা গেছে, কিছু ব্যবসায়ী তা বিক্রি করছেন ৮৫০ থেকে ৮৫২ টাকায়। আবার অনেকে দামের লেভেল মুছে দিয়েও বিক্রি করছেন। তাছাড়া কিছু ব্যবসায়ী তেল লুকিয়ে রেখে গোপনে বেশি দরে বিক্রি করছেন। এসব অপরাধে কাওরান বাজারের কিচেন মার্কেটের সম্প্রতি সাতটি প্রতিষ্ঠানকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের মায়ের দোয়া স্টোরের মালিক বলেন, রমজানে তেলের চাহিদা বেশি। কিন্তু আমরা চাহিদা অনুযায়ী তেল পাচ্ছি না। গতকাল অনেক অনুরোধ করে এক কার্টুন তেল পেয়েছি তা নিমিষেই শেষ।

সুমন নামের আরেক ব্যবসায়ী জানান, সরবরাহ ঘাটতি থাকায় ব্যবসায়ীরা গ্রাহকের তোপের মুখে পড়ছেন। কোম্পানিগুলো আমাদের তেল না দিলে আমরা কীভাবে দেব।  

বেসরকারি চাকরিজীবী আবু বকর রমজানের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে আসেন কারওয়ান বাজারে। তিনি বলেন, অন্য বাজারের তুলনায় কারওয়ান বাজারে ৫-১০ টাকা কমে জিনিসপত্র পাওয়া যায়। এজন্য এখানে এসেছি। সবজি, মাছ মোটামুুটি সহনীয় দামে পেলেও লেবুসহ কয়েকটি পণ্যে অস্বাভাবিক দাম হাঁকছেন ব্যবসায়ীরা। তিনি বলেন, মুদি পণ্যের মধ্যে কয়েক দোকার ঘুরেও সয়বিন পেলাম না।

ভোক্তাদের অভিযোগ, রমজানকে কেন্দ্র করে দাম বাড়ানোর জন্যই ব্যবসায়ীরা বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে এ সংকট তৈরি হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এ কারণে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

এদিকে ভোক্তা অধিকার অধিদফতর বলছে, সয়াবিনের ঘাটতি রয়েছে। তবে রমজান শুরু হলেও সরকারি এই সংস্থাটি বাজারে সয়াবিন ঘাটতির কারণ নিরুপণ করতে পারেনি। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান রোববার সাংবাদিকদের বলেন, সয়াবিন তেলের পাইকারি বা সরবরাহ পর্যায়ে কোনো ধরনের সংকট আছে কি না সেটা জানার জন্য একটু সময় প্রয়োজন হবে। আমরা একটা তদন্ত কমিটি করব। তদন্তের পর জানাতে পারব পারব সংকট আছে কি না। সয়াবিন তেল পর্যাপ্ত থাকলে মানুষ স্বস্তিতে থাকবে।
ভোক্তার ডিজি বলেন, আমরা আজ কাওরান বাজারে খুচরা ও পাইকারি দোকানগুলো পরিদর্শন করলাম। দোকানিদের সঙ্গে আলাপ করে জানতে পারলাম, সয়াবিন তেল ছাড়া অন্য কোনো পণ্যের সংকট নেই। গত বছরের তুলনায় দাম এ বছর কিছুটা কমতির দিকে। তাই দোকানিরা চাহিদা মেটাতে কিছুটা হিমশিম খাচ্ছেন। রমজানে অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। স্বাভাবিকের তুলনা এ মাসে চাহিদা বাড়ে।

যদিও সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনায় রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের একটি অংশ এখনো সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। ভোজ্যতেল নিয়ে যারা দুষ্টামি করে বা ভোক্তার স্বার্থবিরোধী কাজ করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভোক্তার ডিজি বলেন, ভোজ্যতেলের সরবরাহে কিছু ব্যবসায়ী অসহযোগিতা করছেন, যা বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে পারে। এই সংকটের কারণ খুঁজতে বন্দর থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত তদন্ত করার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। এছাড়া ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী তিনটি কোম্পানিকে এরই মধ্যে শোকজ করা হয়েছে। তারা লিখিত জবাবও জমা দিয়েছে। এগুলো পর্যালোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

অতিরিক্ত দামে সয়াবিন তেল বিক্রি করায় জরিমানা

কামারখন্দে অতিরিক্ত দামে সয়াবিন তেল বিক্রি ও মূল্য তালিকা না থাকায় তিন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে অতিরিক্ত দামে সয়াবিন তেল বিক্রি ও মূল্য তালিকা না থাকায় তিন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

গতকাল সোমবার সকালে উপজেলার জামতৈল বাজারে অভিযান পরিচালনা করে এ জরিমানা করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সিরাজগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সোহেল শেখ।

এ সময় তিনি জানান, মাহে রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য জামতৈল বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে মূল্য তালিকা হালনাগাদ না থাকায় মেসার্স মনিরুল স্টোরকে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে সয়াবিন তেল বিক্রি করা এবং বোতলজাত সয়াবিন তেলকে খোলা সয়াবিনে রূপান্তরিত করে বিক্রি করে ভোক্তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত মূল্য নেওয়ার অপরাধে মেসার্স নাঈম স্টোরকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় জনস্বার্থে তদারকি অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

অপরদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনামিকা নজরুল পাইকশা বাজারে একটি মুদি দোকানকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে ৫০০ টাকা জরিমানা করেন। অভিযানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

দুই দিনের মধ্যে সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে

আগামী দুই দিনের মধ্যে সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশিরউদ্দীন।

গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে টাউন হল কাঁচাবাজার পরিদর্শন শেষে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন।

সয়াবিন তেলের সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি নেই। সয়াবিন তেলের সরবরাহ কিছুটা কম। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। আশা করছি আজ থেকেই সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

সয়াবিন তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সেখ বশিরউদ্দীন বলেন, সয়াবিন তেল বেশি দামে যেমন বিক্রি হচ্ছে, তেমনি পামওয়েল সরকার নির্ধারিত দাম থেকে ২৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। আমাদের মোট ভোজ্যতেলের ৬০ শতাংশ পামওয়েল। বাজারে তেলের দাম একই সঙ্গে কমেছে এবং বেড়েছে। আশা করছি সয়াবিন তেলের দামও কমে আসবে।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও খাদ্যে ভেজাল রোধে পবিত্র রমজান মাসে বিএসটিআই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। আজ চারটি বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। এ কার্যক্রম চলমান।

এ সময় অন্যদের মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান, ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান ও বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম উপস্থিত ছিলেন।

Link copied!