Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ০৭ মার্চ, ২০২৫,

রোজায় বিদ্যুৎ থাকবে নিরবচ্ছিন্ন

মহিউদ্দিন রাব্বানি

মার্চ ৭, ২০২৫, ১২:০১ এএম


রোজায় বিদ্যুৎ থাকবে নিরবচ্ছিন্ন
  • রমজানে লোডশেডিংয়ের সম্ভাবনা নেই

  • গ্রীষ্ম ও সেচ নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়

  • সক্ষমতা থাকলেও অর্ধেকও নেই উৎপাদন

  • উৎপাদনে বড় বাধা জ্বালানি সংকট

আমদানিনির্ভর জ্বালানির ওপর ভর করে সুখবর দিলো বিদ্যুৎ বিভাগ। পবিত্র রমজান মাসে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। পাশাপাশি বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে গ্রাহকদের সহযোগিতা চেয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। তবে আসন্ন গ্রীষ্ম ও সেচ মৌসুমে সর্বোচ্চ চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ নিয়ে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। চলতি রমজান মাসে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ দিতে বদ্ধপরিকর বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে সামনের দিনগুলো নিয়ে এখনই কথা বলতে নারাজ তারা।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন গ্রীষ্ম মৌসুমে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার এবং এপ্রিলে ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা ধরা হয়েছে। গত বছর একই সময়ে ১২ থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে। এবার এটি ১৩ থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াট হতে পারে। ঘাটতি পূরণে গত তিন বছরের মতো এবারের গ্রীষ্মেও লোডশেডিং করতে হতে পারে। তবে সম্প্রতি বিদ্যুৎ উপদেষ্টার ছাপ কথা- রমজানে লোডশেডিং হবে না।

উপদেষ্টা বলেন, রমজান মাসে অতিরিক্ত বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ও লোডশেডিং না দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে চার কার্গো অতিরিক্ত এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা আশা করছি রমজান মাসে ইনশাআল্লাহ কোনো লোডশেডিং হবে না। এর আগে ডিসি সম্মেলন শেষে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সাংবাদিকদের বলেছেন, কেপিআই বা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বাদে গ্রাম ও শহরের সব জায়গায় সমান লোডশেডিং দেয়া হবে। আর লোডশেডিং করতে হলে প্রথমে আমার বাসাতে করতে হবে। আমরা একই নীতি অনুসরণ করব। গ্রাম উপেক্ষা করে শহর লোডশেডিংমুক্ত করার এই কৌশল আমরা করব না।

এদিকে দেশে প্রায় ২৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও টেনেটুনে সাড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াটের বেশি উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ফলে সাড়ে ১৬ হাজার থেকে ১৮ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে ওঠানামা করা চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে গড়ে দুই হাজার মেগাওয়াটের ঘাটতিতে পড়ছে দেশ। ফলে বিদ্যুৎ ব্যবহারে বারবার সতর্ক করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। ব্যবহারে কৃচ্ছ্রসাধন ও মিতব্যয়ী হওয়ার কথা বলছে সংস্থাটি।

সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, এক হাজার ৪০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং হতে পারে। বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটাতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) ব্যবহারে সতর্ক করেছেন তিনি। এর আগে এসি ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে বলেও জানিয়েছেন উপদেষ্টা।

পাশাপাশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সাতটি নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)। গ্রীষ্মকাল এবং রমজান মাস উপলক্ষে এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিদ্যুতের অতিরিক্ত চাহিদার কারণে লোডশেডিং হতে পারে বলেও জানানো হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, পুরো রমজানজুড়েই চাহিদা বেশি থাকে। সে অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ করার জন্য পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হলে রমজানে কোনো লোডশেডিং হবে না। তাই শিগগিরই লোডশেডিং হওয়ার সম্ভাবনা নেই। চাহিদা বাড়লে সরবরাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা করে রাখা হয়েছে। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে আমদানিনির্ভর জ্বালানি খাত এক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন। দেশে ডলার সংকট ও বিশ্ববাজারে ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকে জ্বালানি আমদানিতে ভাটা পড়ে।

এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যাপক চাপ থাকা সত্ত্বেও গত ছয় মাসে বিদ্যুতের দাম বাড়ায়নি সরকার। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৪২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে সরকারকে। গ্রাহকরা প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য সরকারকে দেয় ৮.৯০ টাকা। অথচ সরকার কেনে ১২ টাকায়। 

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া নাগরিক হিসেবে সবার অধিকার। শুধু রমজানে চাহিদানুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্টদের। যদি তার ব্যত্যয় ঘটে তাহলে জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এদিকে চাহিদার ঘাটতি নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম।

মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, বিদ্যুতের চাহিদা এখন ১২ হাজার থেকে ১৩ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে। গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে যতটুকু উৎপাদন করা দরকার আমরা তা করতে পারছি। সামনে চাহিদা বেড়ে গেলে কীভাবে উৎপাদন বাড়ানো যায় সেটা আমরা দেখব। তবে সব ধরনের প্রস্তুতি আছে আমাদের। আশা করি ভোগান্তি হবে না।

Link copied!