Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫,

লাখো রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতারে জাতিসংঘ মহাসচিব

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আশ্বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্চ ১৫, ২০২৫, ১২:৪১ এএম


রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আশ্বাস

পৃথিবীতে এতটা বৈষম্যের শিকার অন্য কোনো জনগোষ্ঠী আমি দেখিনি —গুতেরেস

  • মানবিক সহায়তা হ্রাস নিয়ে গভীর উদ্বেগ গুতেরেসের

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গতকাল শুক্রবার কক্সবাজারের উখিয়ায় শরণার্থী শিবিরে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে ইফতার করেছেন।

কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত ১২ লাখ রোহিঙ্গার জন্য মানবিক সহায়তা হ্রাস নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে এতটা বৈষম্যের শিকার অন্য কোনো জনগোষ্ঠী আমি দেখিনি।’

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ভুলতে বসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানবিক সহায়তা কমানো একটি অপরাধ। পশ্চিমা দেশগুলো এখন প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় দ্বিগুণ করছে, কিন্তু তখন আবার বিশ্বজুড়ে মানবিক সহায়তা সংকুচিত হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের ‘অপরিসীম কৃতজ্ঞতা’ প্রকাশ করেন গুতেরেস। তিনি বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের প্রতি অত্যন্ত উদারতা দেখিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আমার জন্য একটি বিশেষ বিষয়।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, তিনি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন এবং তাদের জন্য সহায়তা সংগ্রহকে অগ্রাধিকার দেবেন। চার দিনের সফরে গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় এসেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে যাওয়ার আগে গতকাল দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। ওই বৈঠকে আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে তিনি রমজান মাসে বাংলাদেশে এসেছেন।

গতকাল দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরিদর্শন করেন আন্তোনিও গুতেরেস। সেখানে তিনি রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীদের কথা শোনেন, বলেন এবং ক্যাম্পের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। তার সঙ্গে বিমানের একই ফ্লাইটে কক্সবাজার যান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিমানবন্দরে তাদের স্বাগত জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, আন্তোনিও গুতেরেস কক্সবাজার বিমানবন্দরে নামার পর বেশ কিছু অনুষ্ঠানিকতা শেষ করে উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের উদ্দেশে রওনা দেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- রোহিঙ্গাদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং পাটজাত পণ্যের উৎপাদন কেন্দ্র পরিদর্শন। এসব অনুষ্ঠান শেষ করার পর জাতিসংঘ মহাসচিব উখিয়ায় প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে ইফতার করবেন। পরিদর্শন ও ইফতার শেষে সন্ধ্যায় একসঙ্গে ঢাকায় ফিরবেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব।

গুতেরেস তার আলোচনায় বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি বাংলাদেশ অত্যন্ত উদার। এ সময় তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ভুলে যাচ্ছে বলে হতাশা প্রকাশ করেন। আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, আমি সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করতে চাই। আমরা এখানে আপনাদের সংস্কারকে সমর্থন জানাতে এসেছি। আমরা আপনার মঙ্গল কামনা করি। আমরা কী করতে পারি, আমাদের তা জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই সংস্কার একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং দেশের ‘সত্যিকারের পরিবর্তন’ ঘটাবে।

তিনি বলেন, আমি জানি, সংস্কারের প্রক্রিয়া জটিল হতে পারে। গুতেরেস মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাসে মিয়ানমারে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি সংহতি প্রকাশ করতেও তিনি এখানে এসেছেন বলে জানান। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসরত ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য মানবিক সহায়তা হ্রাসে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, আমি কোনো জনগোষ্ঠীকে এতটা বৈষম্যের শিকার হতে দেখিনি। আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় রোহিঙ্গাদের ভুলে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ত্রাণ কাটছাঁট একটি অপরাধ, পশ্চিমা দেশগুলো এখন প্রতিরক্ষা ব্যয় দ্বিগুণ করছে এবং বিশ্বজুড়ে মানবিক সহায়তা সংকুচিত হচ্ছে। গুতেরেস রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের ‘অশেষ কৃতজ্ঞতা’ প্রকাশ করেন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি বাংলাদেশ অত্যন্ত উদার। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা আমার কাছে একটি বিশেষ কেস। এমন একটি সংকটময় সময়ে বাংলাদেশ সফরের জন্য ড. ইউনূস জাতিসংঘ মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, এর চেয়ে ভালো সময়ে আপনি আসতে পারতেন না। আপনার এই সফর শুধু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য নয়, বাংলাদেশের জন্যও সময়োপযোগী। প্রধান উপদেষ্টা সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পর্কে গুতেরেসকে অবহিত করে বলেন, প্রায় ১০টি রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের বিষয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া জমা দিয়েছে। ড. ইউনূস বলেন, দলগুলো যখন ছয়টি কমিশনের সুপারিশ মেনে নিতে সম্মত হবে, তখন তারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে, যা হবে দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং রাজনৈতিক, বিচার বিভাগীয়, নির্বাচনি, প্রশাসনিক, দুর্নীতিবিরোধী ও পুলিশ সংস্কার বাস্তবায়নের নতুন নকশা।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কারের ‘একটি সংক্ষিপ্ত প্যাকেজে’ সম্মত হলে ডিসেম্বরে নির্বাচন হতে পারে, তবে দলগুলো যদি সংস্কারের ‘বৃহত্তর প্যাকেজ’ মেনে নেয় তবে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টা ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। ড. ইউনূস মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমিতে মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবর্তন এবং ইতোমধ্যে ১২ লাখ শরণার্থীর জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ও মানবিক সহায়তা সংগ্রহে মহাসচিবের সমর্থন কামনা করেন। তিনি বলেন, আমরা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দুর্দশার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছি। বিশ্ববাসীর জানা উচিত তারা কীভাবে কষ্ট পাচ্ছে। একটা হতাশা আছে এখানে। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন এবং রোহিঙ্গাদের অগ্রাধিকার দিয়ে তাদের পক্ষে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করবেন। গুতেরেস বিশ্বের গোলযোগপূর্ণ কিছু অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী বাহিনীর অবদানের প্রশংসা করেন। ‘বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করে তাদের কর্মপ্রচেষ্টা ‘অসাধারণ’ বলে জানানা জাতিসংঘ মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি সুন্দর বিশ্ব গড়ার জন্য সামনের সারিতে কাজ করছে। ড. ইউনূস বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের প্রশংসা করে বলেন, এসব দায়িত্বে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী অনন্য অভিজ্ঞতা লাভ করে। তিনি বলেন, ‘সেনা মোতায়েন আমাদের কাছে অনেক কিছু। ভূ-রাজনীতি এবং সার্কের অবস্থা এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের বিষয়টিও আলোচনায় স্থান পায়, যেখানে প্রফেসর ইউনূস দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক ফোরামকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য তার প্রচেষ্টা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আসিয়ানের সদস্য হতে চায়। প্রধান উপদেষ্টা হিমালয়ের দেশগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ জলবিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও ভারতকে সম্পৃক্ত করে একটি দক্ষিণ এশিয়া গ্রিড তৈরির প্রস্তাব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নেপাল ও ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্থলবেষ্টিত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশকে সংযুক্ত করে দেশকে একটি ‘অর্থনৈতিক কেন্দ্রে’ রূপান্তরের লক্ষ্যে বাংলাদেশ দেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলে বেশ কয়েকটি বন্দর নির্মাণ করছে। প্রফেসর ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন ও জাপানসহ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে। অর্থনীতির অবস্থা সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তার সরকার উত্তরাধিকার সূত্রে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতি পেয়েছে যেখানে একটি ভঙুর ব্যাংকিং খাত রয়েছে, রিজার্ভ হ্রাস পেয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি বলেন, অর্থনীতি এখন সুসংহত হয়েছে। কয়েক মাস ধরেই রপ্তানি বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ভালো।

প্রফেসর ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এমনই ঘুরে দাঁড়িয়েছে যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে বাংলাদেশ আগামী বছর স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য আমরা পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রধান উপদেষ্টা বিগত সরকারের নেতৃত্ব ও তার সংশ্লিষ্টদের চুরি যাওয়া হাজার হাজার কোটি ডলার ফিরিয়ে আনতে তার সরকারের প্রচেষ্টার কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ১৬ বছর ধরে চলা স্বৈরশাসনে প্রায় ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। আমরা টাকা ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করছি। তবে এটি একটি জটিল ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, এটি তাকে ১৯৭৪ সালের পর্তুগালে বিপ্লবের দিনগুলোতে তার সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।

ড. ইউনূস জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের কাজের জন্য মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভোলকার টুর্ককে ধন্যবাদ জানান, যা শেখ হাসিনা সরকারের নৃশংসতা ও সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধ নথিভুক্ত করেছে। তিনি বলেন, তিনি একটি চমৎকার কাজ করেছেন। নৃশংসতা সংঘটিত হওয়ার ঠিক পরই তারা অপরাধগুলো নথিভুক্ত করেছিল। তারা আবার ফিরে আসুক এবং আরও কাজ করুক। বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান ও সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন। জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রাবাব ফাতিমা এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললেন জাতিসংঘ মহাসচিব

কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করছেন বাংলাদেশ সফররত জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গতকাল শুক্রবার দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস কক্সবাজারে পৌঁছান। জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে সরাসরি উখিয়ায় যান।

দুপুর ২টায় সেখানে পৌঁছে তিনি ইউনিসেফ পরিচালিত ফেন্সি লার্নিং সেন্টারে অধ্যয়নরত রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। গতকাল বিকালে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে তিনি জানান, মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে চায়। এজন্য মিয়ানমারে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে আমি দুটি স্পষ্ট বার্তা পেয়েছি। প্রথমত, আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়। আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে অবশ্যই মিয়ানমারে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের অধিকার নিশ্চিত করে কোনো ধরনের বৈষম্যের শিকার তারা যেন না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, দ্বিতীয়ত, রোহিঙ্গারা আরও ভালো পরিবেশ চায় ক্যাম্পে। দুর্ভাগ্যবশত যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য অনেক দেশ সমপ্রতি নাটকীয়ভাবে মানবিক সহায়তা কমিয়ে দিয়েছে। এই কারণে আমাদের মানবিক সহায়তার মধ্যে খাবারের রেশন কমাতে হয়েছে। আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, আমি আমার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। যত দেশ সম্ভব আমি কথা বলব, যাতে করে ফান্ড পাওয়া যায় এবং এর থেকে আরও খারাপ পরিস্থিতি না আসে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ভুলে যাবে, এমনটি প্রত্যাশা করেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ে জোরালো আওয়াজ তুলব। কারণ সম্মানের সঙ্গে এখানে বসবাসের জন্য এই সম্প্রদায়ের মানবিক সহায়তা অত্যন্ত জরুরি।

খুরুশকুলের জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্প পরিদর্শন

কক্সবাজারের খুরুশকুল জলবায়ু উদ্বাস্তু পুর্নবাসন প্রকল্প পরিদর্শন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় তিনি প্রকল্প এলাকায় যান। এ সময় প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে জানান প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রকল্পের ৮২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হবে।

প্রকল্প পরিচালক মিরাজুল ইসলাম জানান, প্রকল্প এলাকাটি ২৫৩ একর জায়গা নিয়ে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। পুনর্বাসন প্রকল্প, বাফার জোন, শুঁটকি মহল ও পর্যটন এরিয়া। এর মধ্যে পুনর্বাসন প্রকল্প ১১২ একর। এই পুনর্বাসন প্রকল্পকে চারটি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে- ব্লক এ, বি, সি, ডি। পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে বর্তমানে ১২৯টি আবাসিক ভবনসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধার জন্য অবকাঠামো নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়।

১২৯টি আবাসিক ভবনে চার হাজার ১২৮টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এই প্রকল্পে ১২৯টি আবাসিক ভবনে জলবায়ু উদ্বাস্তু এবং কক্সবাজার বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন ও সমপ্রসারণের কারণে ভূমিহীন হওয়া সর্বমোট চার হাজার ১২৮টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। পাশাপাশি অধিবাসীদের জন্য নিশ্চিত করা হয়েছে অন্যান্য নাগরিক সুযোগ-সুবিধা। এই প্রকল্পের প্রতিটি পাঁচতলা আবাসিক ভবনের প্রতি তলায় আটটি করে মোট ৩২টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি ফ্ল্যাট ৪০৬ বর্গফুট, যাতে রয়েছে দুটি রুম, রান্নাঘর, বারান্দা ও টয়লেট।

এছাড়া, প্রত্যেক আবাসিক ভবনের নিচতলায় চারটি অতিথিশালা এবং জরুরি অবস্থায় দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এখানে ১২৯টি আবাসিক ভবনের মধ্যে ১২২টি আবাসিক ভবনের নির্মাণকাজে ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে এবং সাতটি ভবনের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্প পরিচালক বলেন, ইতোমধ্যে বি ব্লকের ১৯টি ভবনে মোট ৬০০টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। বাকি নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা ১০৩টি ভবনে ৩ হাজার ২৯৬টি পরিবার এখনই পুনর্বাসন করা সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে এই পুনর্বাসনযোগ্য পরিবারের নামীয় তালিকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং শিগগিরই তিন হাজার ২৯৬টি পরিবারকে আমরা পুনর্বাসন করতে সক্ষম হবো।

তিনি জানান, অনাবাসিক ভবনের মধ্যে একটি মসজিদ ও চারটি সাইক্লোন শেল্টারের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে এবং একটি কমিউনিটি সেন্টার, একটি মন্দির ও একটি মার্কেট কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। উন্নতমানের জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে স্থাপন করা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট/রিভার্স অসমোসিস প্লান্ট, সুয়্যারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, রাস্তা, ড্রেন ও জেটি নির্মাণকাজ চলমান।

বর্তমানে কাজের ৮২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে উল্লেখ করে প্রকল্প পরিচালক বলেন, অবশিষ্ট কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। প্রকল্প এলাকায় নির্মাণ কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার ও সুপারভাইজার তদারকির কাজ করেন। এছাড়া, নির্মাণ সামগ্রীর গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের নিজস্ব ল্যাবরেটরির মাধ্যমে টেস্ট করা হয়।

Link copied!