Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫,

জমে উঠেছে রাজধানীর বিপণিবিতান

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্চ ২২, ২০২৫, ১২:১৩ এএম


জমে উঠেছে রাজধানীর বিপণিবিতান
  • ঈদের কেনাকাটায় সাধ্যের মধ্যে মিলছে না পছন্দের পোশাক

রমজান মাসের শেষ দশক চলে এসেছে, হাতের নাগালে ঈদুল ফিতর। পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে এরই মধ্যে রাজধানী ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন অনেক মানুষ। তবে, রাজধানীর মার্কেট ও শপিংমলগুলোতে এখনও বেশ জমজমাট বেচাকেনা চলছে। ছুটির দিনে সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে নিউমার্কেট এলাকায়। ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ত ক্রেতা-বিক্রেতাদের কারণে পুরো এলাকা যেন এক বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে নিউমার্কেট, সাইন্সল্যাব এবং এলিফ্যান্ট রোডে গিয়ে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, নিউমার্কেটের প্রতিটি দোকানেই ঈদের কেনাকাটার ধুম লেগেছে। পোশাকসহ নানা ঈদ সামগ্রী সাজানো হয়েছে দোকানগুলোতে। ক্রেতারা একে একে তাদের পছন্দের পণ্য বেছে নিচ্ছেন। নিউমার্কেটের মূল অংশে সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে, তবে আশপাশের গাউছিয়া মার্কেট, নূর ম্যানশন মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নূরজাহান সুপার মার্কেট এবং গ্লোব শপিং সেন্টারের ভেতরেও জমজমাট বেচাকেনা চলছে।

এ ছাড়া, পোশাক, জুতা, গহনা, প্রসাধনী, খেলনা ইত্যাদি পণ্য কিনতে আসা ক্রেতারা সড়কে সড়কে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। এ পরিস্থিতিতে কিছুটা দামের সাশ্রয় করতে ফুটপাত থেকেও অনেক ক্রেতাকে পছন্দের পোশাক কিনতে দেখা গেছে।  

ক্রেতারা জানান, নিউমার্কেটের অন্যতম আকর্ষণ হলো এখানে সাশ্রয়ী মূল্যে বিভিন্ন ধরনের পণ্য পাওয়া যায়। তবে, এত বেশি ভিড়ের কারণে চলাফেরা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। মুসলিমা আক্তার নামে এক ক্রেতা বলেন, দুপুরের পর কেনাকাটা করতে এসেছি। এত ভিড় দেখে একটু ভড়কে গিয়েছিলাম। তবে যতটুকু সম্ভব, জিনিসপত্র কিনে নিচ্ছি।

রবিন হাওলাদার নামে আরেক ক্রেতা জানান, পরিবারের সদস্যদের গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছি, আর বাকি কেনাকাটাগুলো করতে এসেছি। সাধারণত ঈদে নতুন কাপড় কিনি। নিউমার্কেটের দাম একটু কম, তাই এখানে এসেছি। তবে এত ভিড় আগে কখনো দেখিনি।

নাহিদ সাব্বির নামে এক ক্রেতা জানান, অফিসের চাপ থাকে অন্যদিন, তাই আজকে কেনাকাটা করতে এসেছি। তবে ভিড় বেশি হওয়ার কারণে পোশাক যাচাই-বাছাই করা কঠিন, কিন্তু দাম বেশ সাশ্রয়ী মনে হচ্ছে।

এদিকে, ব্যাপক বিক্রির ফলে বিক্রেতারা বেশ আনন্দিত। তারা বলেন, এই ঈদে বিক্রি বেশ ভালো হচ্ছে। আমরা ক্রেতাদের সুবিধার জন্য পণ্য বিক্রি করছি। এছাড়া ঈদের বিশেষ ডিসকাউন্ট ও অফারের কারণে ক্রেতাদের আরও আকৃষ্ট করা যাচ্ছে।

ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের আব্দুল লতিফ বলেন, ঈদের আগে আরও ছুটির দিন রয়েছে, তবুও আজ অনেক ভিড়। বিশেষ করে শাড়ি, ছোটদের পোশাক, গহনা ও প্রসাধনীর চাহিদা অনেক বেশি।

নূরজাহান ম্যানশন মার্কেটের বিক্রেতা রবিউল বলেন, এবার ঈদে বিক্রি ভালো হচ্ছে, কিন্তু ভিড় একটু বেশি। তবে আমরা চেষ্টা করছি যাতে ক্রেতাদের কোনো সমস্যা না হয়।

নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহসেন উদ্দীন জানান, ভিড় নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং কোনো ধরনের উশৃঙ্খলা বা অপরাধ যেন না ঘটে, সে জন্য কঠোর নজরদারি চলছে। পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নজর রাখছেন।
সাধ্যের মধ্যে মিলছে না পছন্দের পোশাক

ঈদ মানেই খুশি আর নতুন নতুন পোশাক। পরিবারের সদস্যদের জন্য পোশাক কিনতে রাজধানীর নিউমার্কেটে এসেছেন মনির হোসেন। সঙ্গে তার তিন বছরের মেয়ে মুন্নি এবং স্ত্রী সুইটি আক্তার। মার্কেটে একে তো মানুষের প্রচণ্ড ভিড়, পা ফেলার জো নেই। রোজা রেখেও নিউমার্কেট থেকে শুরু করে চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট এবং চাঁদনী চকে দুই-তিন ঘণ্টা ঘোরাঘুরি করেছেন তারা। তবুও বাজেটের মধ্যে মিলছে না পছন্দের পোশাক।

ভোলার বাসিন্দা মনির হোসেন জানান, ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করি। আর্থিক অভাব-অনটনের মধ্যে সংসার চলে। তাই পরিবারের সবাইকে তেমন কিছু দিতে পারি না। তাই ঈদে ছোট দুই বোনের জন্য এবং স্ত্রী-সন্তানের জন্য জামা কিনতে এসেছি। কিন্তু দুই বোনের থ্রি পিস কিনতে গিয়ে দেখি সবকিছুর দাম বাড়তি। একটু ভালো মানের জামা পছন্দ হলেই দাম চাচ্ছে দুই হাজার টাকা, কোনোটার দাম আরও বেশি। কিন্তু এত টাকা দিয়ে তো কেনা সম্ভব নয়। একজনকেই যদি দুই হাজার টাকা দিয়ে জামা কিনে দিই তা হলে তো পরিবারের অন্য সদস্যদের কিছু দিতে পারব না। তাই ঘোরাঘুরি করছি।

গরমের মধ্যে সন্তানকে ঘোরাঘুরি করতে করতে হাঁপিয়ে উঠছেন তার স্ত্রী সুইটি। তিনি   জানান, আমাদের যে বাজেট রয়েছে। তার মধ্যে সবার জন্যই কিছু কেনাকাটার চিন্তাভাবনা করছি। ঈদ বলে কথা। বাড়ি গেলে সবাই হাতে দিতে চেয়ে থাকবে কি এনেছি। এবার ঈদের সময় খুব গরম পড়বে। তাই সুতি ও হালকা রঙের পোশাক খুঁজছি। কিন্তু আমাদের যে বাজেট রয়েছে তার মধ্যে সেই টাকায় পোশাক কিনতে পারছি না। মনে হচ্ছে বাড়তি ৪০০-৫০০ টাকা খরচ করতে হবে।

কেবল মনির-সুইটি দম্পতি নন, তাদের মতো অনেকের একই অভিযোগ। ক্রেতাদের অনেকেই বলছেন, সব ধরনের পোশাকের দাম আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। দোকানে দোকানে ঘুরেও অনেকে সাধ্যের মধ্যে মেলাতে পারছেন না পছন্দের পোশাক। পোশাকের দাম বাড়তি মনে হওয়ায় কেউ কেউ কম কেনাকাটা করেছেন, কেউবা আবার এখনও দরদাম জানার মধ্যেই আছেন। আবার যদিও দামের তুলনায় পোশাকের মান ও নকশা দুটোই কম মনে হচ্ছে অনেকের কাছে।

রাজধানীর সদরঘাটের গ্রেটওয়াল মার্কেট, ইসলামপুর, জাহাঙ্গীর টাওয়ার, লায়ন টাওয়ার, বঙ্গবাজার, এনেক্সকো টাওয়ার, ওয়ারী, গুলিস্তান, ঢাকা ট্রেড সেন্টার, মৌচাক, আনারকলি মার্কেট, ফরচুন কমপ্লেক্স, সেন্টার পয়েন্ট ও আয়েশা শপিং কমপ্লেক্স, বসুন্ধরা সিটি, মালিবাগ, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট, নিউ সুপার মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নুরজাহান সুপার মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট ও চাঁদনী চকে পাওয়া যাচ্ছে দেশি-বিদেশি কাপড়ের থ্রি পিস। আবার অনেক মার্কেটে পাওয়া যাচ্ছে রেডিমেড থেকে শুরু করে সব বয়সের মেয়েদের জামা কাপড়। এ ছাড়াও মেয়েদের পোশাকের জন্য বিভিন্ন শপিংমলে, অভিজাত বিপণিবিতান ও ফ্যাশন হাউসে মানুষের ভিড় দেখা গেছে।

ক্রেতা ও বিক্রেতা এবং ফ্যাশন হাউসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদকে কেন্দ্র করে মেয়েদের পোশাকে দেশি-বিদেশি বাহারি রং-বেরঙের নিত্যনতুন ডিজাইনের জমকালো আয়োজন করা হয়েছে। ক্রেতাদের ব্যবহারে আরাম, সাধ ও সাধ্যকে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে গরমের সময়ে যেহেতু ঈদ তাই প্রকৃতি ও ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবার সুতিসহ আরামদায়ক কাপড়ে তৈরি এসব পোশাকের কাটিং ও প্যাটার্নে রয়েছে বৈচিত্র্য। সকাল ও রাতের জন্য থাকছে ভিন্ন ভিন্ন পোশাকও। রঙের ক্ষেত্রে রয়েছে লাল, সাদা, মেরুন ও মিশ্রের প্রাধান্য। পাশাপাশি থাকছে ফেব্রিক্স এবং ট্রেন্ডের ভিন্নতাও। পোশাকের কম্পিউটার এম্ব্রয়ডারি, অ্যাপলিক, প্রিন্ট, ফ্লোরাল প্রিন্ট, স্কিন প্রিন্ট, জিওমেট্রিক মোটিফ, কারচুপি ও লেসের কাজ করা হয়েছে।

বিক্রেতারা জানান, ফ্যাশনে নতুন সংযোজন কামিজের কাটে কিছুটা ভিন্নতা এসেছে। অন্যান্য বছরের মতোই বিভিন্ন কার্টুন চরিত্র, ভারতীয় স্টার প্লাস, স্টার জলসা ও জি বাংলা চ্যানেলের সিরিয়ালের নায়ক-নায়িকাদের নামে বিভিন্ন পোশাকের নাম দেয়া হতো কিন্তু এবার তেমন কিছু নেই। এবার দেশীয় কাপড়ের পাশাপাশি ভারতীয় ও পাকিস্তানি থ্রি পিসের চাহিদা বেশি। এ ছাড়াও উজ্জ্বল রং, পরীক্ষাধর্মী কাট আর আরামদায়ক কাপড় ছাড়াও সাধারণ কাটের সালোয়ারের থেকে লেগিংস ও চুড়িদার, কোনাকুনি, এরোপ্লেন কাট ও একটু লম্বাটে কাটের কামিজ বেশি কিনছেন তরুণীরা। এসব পোশাকের কাপড়, মান ও ডিজাইনের যেমন ভিন্নতা রয়েছে তেমনি দামেও ভিন্নতা রয়েছে। সাধারণত এসব পোশাক এক হাজার থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। যদিও অভিজাত এলাকার মার্কেট ও ফ্যাশন হাউসগুলোতে দাম কম-বেশি রয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মার্কেটগুলোতে বেলা বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে ভিড়, বাড়ছে কেনাবেচার ব্যস্ততা। চারদিকে মানুষ আর মানুষ। কোথাও পা ফেলার জো নেই। অভিজাত বিপণিবিতান, শপিংমল, মার্কেট, ছোট-বড় ব্র্যান্ডের দোকান-আউটলেট এমনকি ফুটপাথেও ধুম পড়েছে কেনাকাটার। ক্রেতাদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন বিক্রেতারাও। অনেকের হাতে হাতে শোভা পাচ্ছে শপিং ব্যাগ। ক্রেতাদের অধিকাংশই তরুণ-তরুণী। তবে নারীদের সংখ্যাও কম নয়। আবার স্বামী-স্ত্রীও এসেছেন, কেউবা পরিবার-পরিজন নিয়েও এসেছেন। নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত কেনাকাটার জন্য ভিড় করছেন সবাই।

এ মাকের্টের বিক্রেতা মাহবুব হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত বেশ ভালোই বিক্রি হচ্ছে। আমরাও ক্রেতার চাহিদা প্রাধান্য দিয়ে দোকানে কাপড় তুলেছি। আশা করছি এবার অন্যবারের তুলনায় ব্যবসা ভালো হবে।

সদরঘাটের গ্রেটওয়াল মার্কেটে মেয়েদের জন্য থ্রি-পিস কিনতে এসেছেন জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। জাহাঙ্গীর হোসেন   বলেন, আমাদের সালারি স্মার্ট। কিন্তু রোজা ঈদের খরচ তো অনেক বেশি। পরিবারের সবার জন্যই কেনাকাটা করতে হয়। তাই সাধ্য অনুযায়ী কেনার চেষ্টা করছি। কিন্তু সব কাপড়ের দাম বেশি বলে মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে ৫০ হাজার টাকাও কুলাবে না। তিনি বলেন, ফ্যাশন হাউসগুলোতে পোশাকের দাম গতবারের তুলনায় ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা বেশি।

ঢাকা ট্রেড সেন্টারের স্বাধীন ফ্যাশন হাউসের স্বত্বাধিকারী আবদুল ওয়াহিদ মল্লিক   বলেন, সব কাপড়ের দাম বেড়েছে এটি সঠিক নয়। তবে নতুন নতুন ডিজাইন ও কাপড়ের মানভেদে কিছু ড্রেসের দাম একটু বেড়েছে এটি সত্য।

শাহবাগের আজিজ সুপার মাকের্টের স্বত্বাধিকারী মৃণাল হাওয়ার বলেন, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে কাঁচামালসহ অন্যান্য উপকরণ, কাপড়, রং, সুতা থেকে শুরু করে সবকিছুর দামই বেড়েছে। একই সঙ্গে পোশাক তৈরির শ্রমিকদের মজুরি ও বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে।

Link copied!