নিজস্ব প্রতিবেদক
মার্চ ২৩, ২০২৫, ১২:০১ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
মার্চ ২৩, ২০২৫, ১২:০১ এএম
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য এই সফরকে গুরুত্ব দিচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। একইসঙ্গে বড় শক্তিগুলোর মধ্যে ‘ভারসাম্য’ রক্ষা করে পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নের বিষয়েও সজাগ রয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন যেন ভুল বার্তা না দেয়, সে বিষয়ে নজর রাখছেন কূটনীতিকরা।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক, উন্নয়ন সহযোগিতাসহ বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশের কাছে চীনের গুরুত্ব রয়েছে। একই সঙ্গে অন্যদেশগুলোকে বিভিন্ন ধরনের বার্তা দেয়ার জন্যও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা দরকার বাংলাদেশের। আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে চীনের অবস্থানের বিষয়ে বাংলাদেশের পরিষ্কার ধারণা আছে। বেইজিংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করা হলে অন্য আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শক্তিগুলো কি প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে, সেটি আমাদের বিবেচনায় আছে। তিনি বলেন, স্ট্র্যাটেজিক সভরেইনটি বা কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য সার্বভৌম অধিকার বাংলাদেশের আছে। একই সঙ্গে চীনের বিষয়ে বাংলাদেশ কেন এবং কী প্রেক্ষাপটে কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সেটি অন্য দেশগুলোকে বিভিন্নভাবে এবং বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ব্যাখ্যা করারও প্রয়োজন রয়েছে। যেকোনো দেশ জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে তাদের পররাষ্ট্র নীতির বাস্তবায়ন করে থাকে।
জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে কোনো দেশের কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেয়ার সার্বভৌম অধিকার বা ক্ষমতা থাকাই হচ্ছে স্ট্র্যাটেজিক সভরেইনটি। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ হিসেবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ পৃথক দুটি রেজুলেশন প্রস্তাব করে জাতিসংঘে। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র যে রেজুলেশনটি এনেছিল সেটিতে ‘হ্যাঁ ভোট’ দিয়েছে এবং ইউরোপের রেজুলেশনে ভোটদানে বিরত ছিল। এটি একটি স্ট্র্যাটেজিক সিদ্ধান্ত এবং বাংলাদেশ সেটি নিয়েছে। তিনি বলেন, তবে একইসঙ্গে আমরা গোটা বিষয়টি ইউরোপকে বুঝিয়ে বলেছি যে, বাংলাদেশ কেন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর বিষয়ে অন্য যেসব দেশের আগ্রহ রয়েছে, তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হতে পারেই। আমরা সবসময় ভারসাম্য রক্ষা করে পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়ন করে থাকি। তবে কূটনীতিতে এর মানে এই নয় যে, এটি সবসময় ৫০-৫০ ভারসাম্য। কখনও কখনও এটি কোনো দেশের দিকে ৬০ ভাগ বা অন্য দেশের প্রতি ৪০ ভাগ হতে পারে। যেমন জাতিসংঘ রেজুলেশনের ক্ষেত্রে হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের তিনটি বৈশ্বিক উদ্যোগ আছে। সেগুলো হচ্ছে গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ, গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ এবং গ্লোবাল সিভিলাইজেশন ইনিশিয়েটিভ। এর মধ্যে গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের বিষয়ে ২০২২ সালে বাংলাদেশকে অবহিত করেছিল চীন। প্রধান উপদেষ্টার এবারের সফরে এটি গুরুত্ব পেতে পারে।
এ বিষয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় আছে। যদি আমরা এর টেক্সট বা সারবস্তু বিবেচনায় নেই, এটিতে স্পর্শকাতর তেমন কোনো বিষয় নেই। অনেক সময়ে টেক্সট ঠিক আছে কিন্তু কনটেক্সট বা প্রেক্ষাপট ঠিক না থাকলে, সেটিতে যুক্ত হওয়া ঠিক সিদ্ধান্ত হয় না। তিনি বলেন, আমরা সবদিক বিবেচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো। উল্লেখ্য, চীনের হাইনান প্রদেশে ২৫ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত বোয়াও (বিওএও) ফোরাম ফর এশিয়া কনফারেন্সে যোগ দেয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। পরবর্তী সময়ে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পরে বোয়াও ফোরাম কনফারেন্সে প্রধান উপদেষ্টা যোগ দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। উভয়পক্ষ রাজি হলে এবারের সফরে একাধিক চুক্তি সই হতে পারে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
বিমসটেক ইয়াং জেন ফোরামে প্রধান বক্তা ড. মুহাম্মদ ইউনূস
তরুণ উদ্যোক্তাদের অনুপ্রাণিত করবে এমন ফোরাম বিমসটেক ইয়াং জেন ফোরামে প্রধান বক্তা হিসেবে যোগ দেবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আগামী ৩ এপ্রিল আইকনসিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য বিমসটেক ইয়াং জেন ফোরামে (তরুণ প্রজন্ম সম্মেলনে) তরুণ ব্যবসায়ী নেতাদের ধারণা বিনিময় এবং ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা অন্বেষণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ২ থেকে ৪ এপ্রিলের মধ্যে থাইল্যান্ডের ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন এবং এ সম্পর্কিত বৈঠকের অংশ এই সম্মেলন। অনুষ্ঠানের আয়োজকরা জানান, ড. ইউনূস বিমসটেক সদস্য দেশগুলোতে তরুণদের জন্য তাদের সহযোগিতা ও মেধা বিকাশের জন্য কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে মূল ব্যক্তি।
ড. ইউনূস তার অসামান্য অর্জনের জন্য অর্থনীতিবিদ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। দরিদ্রদের ক্ষমতায়নে তিনি ক্ষুদ্রঋণ ধারণার প্রবর্তন করেন, যাতে তারা উদ্যোক্তা হতে পারে। ড. ইউনূস ১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। তার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করা। ২০০৬ সালে তিনি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। আগামী ৪ এপ্রিল ব্যাংককে অনুষ্ঠেয় বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে ড. ইউনূসের।