Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৪ মার্চ, ২০২৫,

প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থের চাহিদা কম

আরএডিপিতে বেড়েছে বরাদ্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্চ ২৩, ২০২৫, ১২:২৮ এএম


আরএডিপিতে বেড়েছে বরাদ্দ

প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থের চাহিদা কমায় সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) থোক বরাদ্দ বাড়ছে। দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে চলতি অর্থবছরের উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থের চাহিদা না থাকায় সংশোধিত এডিপিতে কমানো হয়েছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা। তারপরও চাহিদা আরও অনেক কম। এমন পরিস্থিতির কারণে থোক বরাদ্দ হিসেবে রেখে দিতে হয়েছে আরও প্রায় ২৬ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো অর্থবছরে আগে কখনো রাখা হয়নি এতো বিপুল পরিমাণ থোক বরাদ্দ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) ‘বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা’ নামে ২৬ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ হিসেবে রাখা হয়েছে। যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। অথচ এ খাতে গত অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ চার হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে আরএডিপিতে ১৮ হাজার ৫৭ কোটি টাকা ধরা হয়েছিল। ওই হিসাবে এক বছরে আরএডিপিতে থোক বরাদ্দ বেড়েছে প্রায় আট হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা বা ৪৭.৪৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি থেকে ১৮.৪৯ শতাংশ বা প্রায় ৪৯ হাজার কোটি টাকা কেটে নিয়ে এনইসি সম্প্রতি দুই লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকার আরএডিপি অনুমোদন দিয়েছে। কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগের নাম উল্লেখ না করেই নতুন আরএডিপিতে ১২.৩৩ শতাংশই থোক বরাদ্দ হিসেবে রাখা হয়েছে। এর আগে মূল এডিপির ২.৯৩ শতাংশ বা ছয় হাজার ৩২৯ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। ওই হিসাবে সংশোধিত এডিপিতে মূল এডিপির তুলনায় থোক বরাদ্দ বেড়েছে ২০ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা বা চার গুণেরও বেশি।

সূত্র জানায়, বিগত ২০১৯-২০ অর্থবছরের এডিপি থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের আরএডিপি পর্যন্ত থোক বরাদ্দের পরিমাণ মোট বরাদ্দের আধা শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরের এডিপিতে এর হার ০.৪৭ শতাংশ থাকলেও আরএডিপিতে বেড়ে দাঁড়ায় ১.৬৬ শতাংশে। এর পর থেকেই থোক বরাদ্দের পরিমাণ ও শতকরা হার বেড়েই চলেছে। মূলত সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দেয়ার কারণে থোক বরাদ্দের পরিমাণ বেড়েছে।

সূত্র আরও জানায়, সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে আরএডিপি বাস্তবায়নে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এক লাখ ২০ হাজার ৮৭৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ও বিদেশি সহায়তা বাবদ ৭০ হাজার ২৩৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা মিলে মোট এক লাখ ৯১ হাজার ১১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকার চাহিদা পাওয়া গিয়েছিল। তবে অর্থ বিভাগের বরাদ্দের আলোকে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এক লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা ও প্রকল্প সহায়তার ৮১ হাজার কোটি টাকা যোগ করে দুই লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকার এডিপি প্রণয়ন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়গুলো চাহিদার তুলনায় এডিপির আকার ২৪ হাজার ৮৮৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা বা প্রায় ১৩.০২ শতাংশ বেশি ধরা হয়েছে। তার মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বেশি ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ১২৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বা ১১.৬৯ শতাংশ। আর প্রকল্প সহায়তা বাবদ এডিপিতে ১০ হাজার ৭৬২ কোটি ১৬ লাখ টাকা বা ১৫.৩২ শতাংশ বেশি জুড়ে দেয়া হয়েছে।

এদিকে পরিকল্পনা কমিশন সংশ্লিষ্টদের মতে, চলতি অর্থবছর বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন গতি কম থাকায় সরকারি তহবিলের চাহিদাও কমেছে অনেক। সাধারণত অন্যান্য অর্থবছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের  সরকারি তহবিল থেকে চাহিদা অনেক বেশি থাকে। কিন্তু চলতি অর্থবছরে এডিপিতে যে পরিমাণ সিলিং বেঁধে দেয়া হয়েছে, চাহিদা তার চেয়ে কম। মূলত দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বেশ কিছু বড় প্রকল্পে উন্নয়ন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। তাছাড়া পালিয়ে গেছে কিছু ঠিকাদারও।

এদিকে পরিকল্পনা বিভাগ ও কার্যক্রম বিভাগের সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন জানিয়েছেন, চাহিদার তুলনায় সম্পদ বেশি থাকায় চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দেয়ার পর অবশিষ্ট অর্থ বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা হিসেবে পরিকল্পনা কমিশনে থোক রাখা হচ্ছে। পরে চাহিদার ভিত্তিতে বরাদ্দ প্রকল্পভিত্তিক বরাদ্দ পুনর্বণ্টন ও পুননির্ধারণ করা হবে।

Link copied!