নিজস্ব প্রতিবেদক
এপ্রিল ৮, ২০২৫, ১২:৪৭ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
এপ্রিল ৮, ২০২৫, ১২:৪৭ এএম
ফিলিস্তিনের বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যাকারী ও দখলদার ইসরাইলের পাশবিক হামলার প্রতিবাদে এবং অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ-মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার বিশ্বব্যাপী ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ শীর্ষক কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়। এর আগে গত ৫ এপ্রিল প্রথম এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় ‘ট্রান্সলেটিং ফালাস্তিন’ নামের একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে।
এদিন ফজরের নামাজের পর রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ শুরু করেন মুসল্লিরা। পর দিনের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষজন স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইসরাইলবিরোধী এসব বিক্ষোভে অংশ নেয়।
জানা যায়, গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন শিক্ষার্থীরা। বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে বিক্ষোভ সমাবেশ করে হেফাজতে ইসলাম। রাজধানীর বায়তুল মোকাররম ও গুলশান এলকায় বিক্ষোভ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
মিরপুরসহ একাধিক স্থানে মিছিল-সমাবেশ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। আর গাজাবাসীর ডাকা হরতালের সমর্থনে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় ওই এলাকার চারদিকে বিক্ষোভকারীদের ঢল নামে। সংসদ ভবনের সামনে বিক্ষোভকারীদের হাতে বিভিন্ন ফটোকার্ড, ব্যানার ও মিছিল নিয়ে সমবেত হন হাজার হাজার মানুষ।
এ দিন রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, নারায়নগঞ্জসহ দেশের প্রত্যেকটি জেলা এবং উপজেলায় বিক্ষোভ করেছে জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বিভিন্ন বাম সংগঠন। এ ছাড়া এদিন গাজাবাসীর ডাকে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রেখে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলে বিক্ষোভ মিছিল প্রদর্শন করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এসব সমাবেশ থেকে গাজায় ইসরাইলি হামলা ও গণহত্যা বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা, গাজায় গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করতে মুসলিম বিশ্ব, ওআইসি ও জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বিক্ষোভকারীরা।
এদিকে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর অব্যাহত গণহত্যা এবং চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
বিবৃতিতে বলা হয়, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পর থেকে ইসরাইলি সামরিক হামলায় বহু ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এর ফলে গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছানো বন্ধ হয়ে গেছে, যা বাসিন্দাদের মানবিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। স্পষ্টত ইসরাইল বারবার আন্তর্জাতিক আবেদনের তোয়াক্কা করেনি বরং ক্রমবর্ধমান হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে। বাংলাদেশ নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জাতিগত নির্মূল অভিযান চালানোর উদ্দেশ্যে গাজার ঘনবসতিপূর্ণ বেসামরিক এলাকায় ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর নির্বিচার বিমান হামলা ও বোমাবর্ষণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার ইসরাইলকে অবিলম্বে সমস্ত সামরিক অভিযান বন্ধ, সর্বাধিক সংযম প্রদর্শন এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে তার দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানাচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে জাতিসংঘের কাছে আবেদন করছে যে তারা নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন এবং বেসামরিক নাগরিকদের জীবন রক্ষা ও অবরুদ্ধ গাজায় মানবিক ত্রাণ পৌঁছানোর জন্য অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে তার নৈতিক ও আইনি দায়িত্ব পালন করুক। ফিলিস্তিনি জনগণের সব ন্যায্য অধিকার, আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী সীমানা অনুসারে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি বাংলাদেশ সরকার দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছে, যার রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ সরকার মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তির জন্য আলোচনার প্ল্যাটফর্মে ফিরে আসার প্রয়োজনীয়তা পুনর্ব্যক্ত করছে, যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর সহিংসতা ও দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে কূটনীতি এবং সংলাপের পথে নিজেদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘের প্রস্তাব এবং শান্তি, মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের জন্য ফিলিস্তিনিদের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানে পৌঁছাতে কাজ করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে বাংলাদেশ।