নিজস্ব প্রতিবেদক
এপ্রিল ১১, ২০২৫, ১২:১৯ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
এপ্রিল ১১, ২০২৫, ১২:১৯ এএম
সরকারি গুদামে চাল দেয়ার চুক্তি না করা এবং চুক্তি করেও যথাযথভাবে চাল সরবরাহ না করায় শাস্তির আওতায় আসছে রাজশাহী বিভাগের বিপুলসংখ্যক চালকল। ওসব চালকলের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক দপ্তর থেকে ৯১৩টি চালকলের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ খাদ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় চালকলের বিরুদ্ধে শাস্তি ঠিক করবে। চাল দেয়ার চুক্তি করেনি এমন ৭৫১টি মিলের মধ্যে ৪৫টি অটো রাইস মিলস রয়েছে। আর বাকিগুলো হাসকিং মিলস। আর চুক্তি করে গুদামে চাল দেয়নি এমন মিলের সংখ্যা ১৬২টি।
তার মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার ৮০ শতাংশ চাল দিয়েছে এমন মিলের সংখ্যা ৩০টি আর ৫০ শতাংশ চাল দিয়েছে এমন মিলের সংখ্যা ৭১টি। খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, খাদ্য গুদামে যেসব মিল চাল দেয়নি বা চুক্তিযোগ্য ছিল কিন্তু চুক্তি করেনি এমন মিলের একটি তালিকা করা হয়েছে। চুক্তিপত্র অনুযায়ী চলতি মৌসুমে যারা ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ চাল দিয়েছে তাদের জামানত থেকে টাকা কেটে নিয়ে জরিমানা করার সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি যারা চালই দেয়নি তাদের বিরুদ্ধে লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে পরবর্তী নির্দেশনা আসলে তা কার্যকর করা হবে। সূত্র জানায়, রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোতে চলতি মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। ধান-চাল সংগ্রহের সময়সীমা কয়কদফা বাড়ানো হলেও তাতে কোনো সুফল আসেনি। ফলে লক্ষ্যমাত্রা না পূরণ করেই খাদ্য বিভাগ সংগ্রহ অভিযান শেষ করেছে। ওই বিভাগের আটটি জেলায় ৫৬ হাজার ৩৫৯ টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৩৯৫ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৭ শতাংশ। প্রতি মণ এক হাজার ৩২০ টাকা দরে কৃষকরা সরকারি গুদামে বেশি ধান দেয়নি।
কারণ রাজশাহী অঞ্চলের হাট-বাজার ও মোকামে কৃষকরা ধান বিক্রি করেছে এক হাজার ৪৫০ টাকা দরে, যা সরকারি মূল্যের চেয়ে ১৩০ টাকা বেশি। তাছাড়া চলতি মৌসুমে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় সিদ্ধ চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ১১ হাজার ২৬৩ টন। কিন্তু মৌসুম শেষে ৯৪ দশমিক ৭০৭ টন সংগ্রহ হয়েছে। আর আতপ চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১ হাজার ৮৯১ টন কিন্তু সংগ্রহ হয়েছে ১৯ হাজার ৫২৯ টন।
এদিকে কৃষকদের মতে, সরকারি গুদামে ধান দেয়ার পরিবেশ নেই। আবার দামও কম। সরকারি গুদামে বাকিতে ধান বিক্রি করতে হয়। টাকা পেতে ঝামেলা পোহাতে হয়। বিপরীতে হাট-বাজারে তারা নগদে ধান বিক্রি করতে পারে। সরকারি গুদামের দেয়া মূল্যের সঙ্গে খোলা বাজারে চালের মূল্য বেশি হওয়ায় মিলারদের গুদামে পড়ে থাকা আগের বছরগুলোর পুরোনো চালই সরকারি গুদামে বেশি এসেছে। পুরোনো ওসব চালের খাদ্য মূল্য, পুষ্টিমান ও ব্যবহারযোগ্যতা নতুন চালের তুলনায় অনেক কম। ক্রয় লক্ষ্যমাত্রা পূরণে গুদাম কর্মকর্তারা মানহীন ওসব পুরনো চাল কিনে গুদামে ভরেছে। মিল মালিকরাও লাইসেন্স বাঁচাতে পুরনো চাল গুদামে দিয়েছে। অনেক মিল মালিক ভারত থেকে আমদানি করা পুরোনো চাল গুদামে দিয়েছে।