Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫,

কক্সবাজারে যেভাবে যাবেন ও খরচ যেমন পড়বে

আমার সংবাদ ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২২, ০১:৪০ পিএম


কক্সবাজারে যেভাবে যাবেন ও খরচ যেমন পড়বে

বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সর্ববৃহৎ পর্যটন স্পট হলো কক্সবাজার। সু-বিশাল সমুদ্র সৈকত সেইসাথে পাহাড়, ঝরনা ও বর্তমানে যুক্ত হওয়া দৃষ্টিনন্দন মেরিন ড্রাইভ রোডের কারণে ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে কক্সবাজারের চাহিদা সর্বদাই উপরের দিকে। সারাবছরই পর্যটক থাকে কক্সবাজারে। তবে ছুটির দিনগুলো ও শীতকালে পর্যটকদের ভিড় অত্যধিক হয়ে যায়। আসুন জেনে নেই কক্সবাজারে কিভাবে যাবেন এবং কেমন খরচ পড়বে।

ঢাকা থেকে বাসে যেভাবে যাবেন কক্সবাজার
ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিভিন্ন উপায়ে আসা যায়। ঢাকা থেকে গ্রিন লাইন, সৌদিয়া, এস আলম, মার্সিডিজ বেঞ্জ, সোহাগ পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, এস.আলম পরিবহন, মডার্ন লাইন ইত্যাদি বাস প্রতিদিন কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে ষায়। শ্রেনিভেদে বাসগুলোর প্রত্যেক সীটের ভাড়া ৯০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকার পর্যন্ত। ঢাকা থেকে কক্সবাজার বাস ভাড়া সাধারণত ৮০০ টাকা কিন্তু একটু কষ্ট করে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ১২০ টাকায় মেইল ট্রেনে গিয়ে সেখান থেকে ২২০-২৫০ টাকার মধ্যে কক্সবাজারের বাস পেয়ে যাবেন। চট্টগ্রাম পর্যন্ত সিডিএম নামে একটু সাধারণ মানের একটি বাসও যায়, সায়েদাবাদ থেকে ছাড়ে। ভাড়া পড়বে ২৫০-৩০০ টাকা। এভাবে ভেঙ্গে ভেঙ্গে কক্সবাজার যেতে আপনার খরচ পড়বে ৪০০-৫০০ টাকা সেইসাথে সকালের পরিবর্তে দুপুর ১২-১টা নাগাদ পৌঁছবেন কক্সবাজারে।

ট্রেনে কক্সবাজার যাবেন যেভাবে
ঢাকা থেকে ট্রেনে কক্সবাজার ভ্রমণ করতে চাইলে কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে সোনার বাংলা, সুবর্ন এক্সপ্রেস, তৃর্ণানিশীথা, মহানগর প্রভাতী/গোধুলী ট্রেনে চট্টগ্রাম চলে আসতে পারেন। এরপর চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ এলাকা অথবা ধামপাড়া বাস্ট স্ট্যান্ড থেকে হানিফ, এস আলম অথবা ইউনিক পরিবহনের বাসে কক্সবাজার আসতে পারবেন।

বিমানে করে যেভাবে কক্সবাজার যাবেন
এছাড়া আকাশ পথেও কক্সবাজার আসা যায়। বাংলাদেশ বিমান, নভোএয়ার, ইউএস বাংলা এবং রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। আবার আকাশপথে প্রথমে চট্টগ্রাম এসেও সেখান থেকে সড়ক পথে কক্সবাজার যেতে পারবেন। বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের ভাড়া বিভিন্ন রকম। সাইটে দেখে নিতে পারেন।

কক্সবাজার গিয়ে যেখানে থাকবেন
কক্সবাজারে এখন প্রচুর হোটেল, মোটেল, কটেজ আছে। এদের মধ্যে সায়মন বিচ রিসোর্ট, মারমেইড বিচ রিসোর্ট, সী গাল, ওশেন প্যারাডাইজ, লং বীচ, কক্স টুডে, হেরিটেজ, সী প্যালেস, কোরাল রীফ, নিটোল রিসোর্ট, আইল্যান্ডিয়া, বীচ ভিউ, সী ক্রাউন, ইউনি রিসোর্ট, উর্মি গেস্ট হাউজ, কোরাল রীফ, ইকরা বিচ রিসোর্ট, অভিসার, মিডিয়া ইন, কল্লোল, হানিমুন রিসোর্ট, নীলিমা রিসোর্ট উল্লেখ্য। বিভিন্ন হোটেলের ভাড়া বিভিন্ন রকম। আপনার প্রয়োজন অনুসারে বেছে নিন। সাধারণত অফ সিজনে অগ্রিম হোটেল বুকিং না দিলেও চলে। কিন্তু সিজনে (ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী) অগ্রিম বুকিং দিয়ে যাওয়াই ভালো। নাহলে ঝামেলায় পড়তে পারেন। অফসিজনে হোটেলের ভাড়া প্রায় অর্ধকে নেমে আসে। সুযোগ থাকলে কক্সবাজার নেমে কয়েকটি হোটেল দেখে একটু দরদাম করে নিতে পারেন। বীচ এবং মেইন রোড থেকে হোটেল যত দুরে হবে হোটেলের ভাড়া ততো কমতে থাকবে। হোটেল খোঁজার ক্ষেত্রে রিকশাওয়ালা বা সিএনজিওয়ালার পরামর্শ নিতে পারেন। তাদেরকে আপনার বাজেট আর চাহিদা বলে দিলে তারাই আপনাকে ওই ধরণের হোটেলেই নিয়ে যাবে। তবে সাধারণত এরা যেখানে কমিশন পাওয়া যাবে আপনাকে সেখানেই নিয়ে ষাবে। প্রয়োজনে হোটেলের ফেইসবুক পেইজ বা ওয়েবাসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে নিতে পারেন।

খাবার খাবেন যেখানে
কক্সবাজারে খাবারের জন্য অনেক খরচ হয়ে যায়। একসঙ্গে কয়েকজন গেলে অবশ্য খাওয়ার খরচসহ সব খরচই কমে আসে। যেমন- একটি লইট্টা মাছের ফ্রাই নিলে ৩ জন খাওয়া যায়। আবার ৮০ টাকা প্লেটের ভর্তা ভাজি নিলে ৪ জনে ভাগ করে আনায়সে খাওয়া যায়।মূল খাবারের জন্য যে তরকারি নেবেন সেটিও ভাগ করে খাওয়া যায়। এরকম ভাগ করে খেতে পারলে আপনার খরচ মাথাপিছু প্রতি বেলা ১৫০ টাকায় নেমে আসবে। এছাড়াও শহরে গিয়ে খেলেও খাবারের খরচ অনেক কমে যাবে। শহরের লালদীঘির পাড়ে অনেক হোটেল আছে, সেখানে কম খরচে খেতে পারবেন। যদিও কিছু আইটেমের দাম বেশি। সেগুলো তালিকা থেকে এগুলো বাদ দিন। যেমন- রূপচাঁদা মাছ অর্ডার করলেই ৩৫০ টাকা যোগ হয়েবে। একই কথা চিংড়ি মাছের জন্যও প্রযোজ্য। ওশেন প্যারাডাইজ হোটেলের উল্টো দিকে গলির ভেতরে বেশ কয়েকটি ভালো খাবারের হোটেল আছে। সেখানে খেলে খরচ কিছুটা কমাতে পারবেন।

কোথায় শপিং করবেন
কক্সবাজারে শপিং করার জন্য অনেক গুলো মার্কেট আছে। বীচের পাশেই বেশ কিছু মার্কেট আছে। যেখানে বার্মিজ চকলেট, আচার, জুতা, জামাকাপড়, মুক্তার জিনিসপত্র, ক্যাপ, খেলনা, শুটকি ইত্যাদি পাবেন। পছন্দ মতো দরকার করে কিনে নিতে পারেন।তবে চকলেট, আচার কিনলে একটু দাম দিয়ে ভালো জিনিস কেনাই ভালো। প্রচুর ভেজাল মাল পাওয়া যায়৷ দোকানদারকে বললে ওরা আসল জিনিস দেবে। কক্সবাজার শহরেও বেশ কিছু মার্কেট আছে। শহরে ভালো কালেকশন পাবেন। আর শুটকি কিনলে শহর থেকে কেনাই ভালো। শহরে বিশাল শুটকি মার্কেট আছে৷ যেকোনো ড্রাইভারকে কে বললে দেখায় দিবে।

যেখাবে বীচে বা শহরে ঘুরবেন
ইনানি বা হিমছড়ি যেতে চাইলে কলাতলী মোড়ে এসে উঠে যেতে পারেন লোকাল ইজি বাইক/অটোতে। হিমছড়ি পর্যন্ত মাত্র ২০ টাকা ভাড়ায় চলে যেতে পারবেন। ৫০ টাকা খরচ করে যাওয়া যায় ইনানি বিচ পর্যন্তুও। আর যদি সংখ্যায় বেশি হোন চাইলে হিমছড়ির জন্য ২০০ টাকাতেও অটো রিজার্ভ করে নিতে পারবেন। একইভাবে যদি মহেশখালি যেতে চান তবে লঞ্চঘাট থেকে শেয়ারে স্পীড বোট উঠে পার হবেন। তারপর আদিনাথ মন্দির ঘুরে দেখে আবার চলে আসবেন কক্সবাজার। মেরিন ড্রাইভে যদি ট্রিপ দিতে চান তবে কলাতলি মোড়ে এসে সম্ভব হলে জীপে উঠে বসবেন। আগে আগে গেলে সামনের সিটে বসে উপভোগ করতে পারবেন পুরো মেরিন ড্রাইভ, খরচও নামমাত্র।

হোটেলে সঠিক সময়ে চেক আউট করুন
মনে রাখবেন আপনার হোটেলের চেক ইন সাধারণত দুপুর একটা আর চেক আউট সকাল ১১টার দিকে হয়। আগেই হোটেলে জানিয়ে রাখবে আপনার গাড়ি রাতে ছাড়বে, সন্ধ্যা পর্যন্ত আপনি কী হোটেলের রুমে থাকতে পারবেন কিনা। সাধারণত ভিড় না থাকলে হোটেল মালিকরা কোনো ঝামেলা করে না। তবে ভিড় থাকলে আপনাকে ১১টার পর আর সময় দেবেনা। এসব ক্ষেত্রে যেটা করতে পারেন রুম ছেড়ে দিয়ে লাগেজ রেখে যেতে পারেন হোটেল কাউন্টারে। সেক্ষেত্রে সারাদিন ঘুরে ফিরে সন্ধ্যায় হোটেলে এসে ব্যাগ নিয়ে চলে যাবেন বাস ধরার উদ্দেশ্যে। একটি জিনিস মনে রাখবেন আপনার টাকা কম বলে লজ্জা পাবার কিছু নেই। বরং অল্প টাকা নিয়ে আপনি দেশ দেখতে বের হয়েছেন এটা গর্বের বিষয়। একসময় হয়তো আপনার টাকা হবে, তখন ঘোরাঘুরি করা সময় নাও থাকতে পারে।

আমার সংবাদ/ আরএইচ